ফুলতলা উপজেলা সংবাদদাতা : গত এক সপ্তাহের অভিরাম বর্ষণে খুলনার ফুলতলা উপজেলার অধিকাংশ গ্রামের আংশিক তলিয়ে গেছে। মৎস্য ঘের ও কৃষি জমির ক্ষয় ক্ষতির পরিমান সাড়ে ৫ কোটি টাকা। তবে অধিকাংশ রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী ও পেশাজীবিদের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।

গত আষাঢ় এবং শ্রাবণ দুই মাস যাবৎ অতি বৃষ্টি হওয়াতে ফুলতলা উপজেলা সদরসহ বিলিডাকাতিয়ার নিম্নাঞ্চলসহ প্রাবিত হয়েছে। শৈলমারী গেট ও ভৈরব নদীতে জোয়ারের পানির চাপ থাকায় পানি নিষ্কাশনে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। এ অবস্থায় বিলডাকাতিয়া এলাকায় চিৎড়ি ও সাদা মাছ ঘের ব্যবসায়ী পড়েছে বিপাকে। গত বছরও বিলডাকাতিয়ার অধিকাংশ চিংড়ি ও মৎস্য ঘের চাষিরা তাদের কাক্সিক্ষত সুফল ঘরে তুলতে পারেনি। এ বছর আষাঢ়ের প্রথম থেকেই বৃষ্টি বেশি হওয়ায় অধিকাংশ চাষীরা মাছ দিতে পারেনি। আবার কিছু কিছু চাষীরা মাছের রেনু পোনা দিয়ে দুঃচিন্তায় রেয়েছে। অতিবর্ষনে চিৎড়ি মাছের ঘেরের ক্ষতি হয়েছে শুধু তা নয় একই সাথে ধান চাষ ও নানা রকম সবজী চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে বসুরাবাদ গ্রামের বাটুল মোহন্ত বলেন, আগের বৃষ্টিতেই আমাদের অধিকাংশ ঘের তলিয়ে গেছে। এই বৃষ্টিতে আমাদের ঘর বাড়িও তলিয়ে গেছে। ফলে আমাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী মুজারঘুটা, বটবেড়া, কৃষ্ণনগর, সাড়াভিটা ও ডাকাতিয়া, গোলদারপাড়া, গাড়াখোলা, পঠিয়াবান্দা গ্রামসহ নিম্নাঞ্চল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

এলাকায় সবজীতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে কৃষকের মাথায় হাত। এ ছাড়াও গো খাদ্যেও সংকট দেখা দিয়েছে। যার ফলে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করছে বলে কৃষের অভিযোগ। অনেক গরু ও ছাগল ব্যবসায়ীরা গো খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে কম দামে গরু ও ছাগল বিক্রি করছে বলে গাড়াখোলা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী নজরুর ইসলামের দাবি। গাড়াখোলা গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুর সাত্তার মামুন বলেন, বিলডাকাতিয়ার ডাকাতিয়া, বরণপাড়া, গোলদারপাড়া, গাড়াখোলা মাছ বাজার, পিপরাইল খালসহ ৮০ ফুট খাল গুলো খনন ও সংস্কার জরুরী। এই খালগুলি সংস্কার হলে পানি দ্রতি নিষ্কাশন হলে নিম্নাঞ্চল প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পেত।

এদিকে ফুলতলা সদর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার বলেন, ফুলতলার ড্রেনেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে অবৈধ ভবন নির্মান করায় ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ে। যার ফলে ফুলতলা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে খুলনা-যশোর মহাসড়কে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদের এলডিইডি বিভাগের উদ্যোগে নির্মিত ফুলতলা বাসষ্টান্ডের পশ্চিম পার্শ্বে ড্রেনেজ দিয়ে ভৈরব নদীতে পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু নদীতে জোয়ারের পানির চাপ থাকায় ড্রেন দিয়ে পানি ধীর গতিতে নিষ্কাশন হচ্ছে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, ফুলতলায় অতিবর্ষণ এবং জলাবদ্ধতার কারণে ১ হাজার চাষীর ২৪২ হেক্টর জমির প্রায় ১৬শ’ চিংড়ি ও মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমান প্রায় ৫ কোটি টাকার উপরে।

উপজেলা কৃষি অফিসার আরিফ হোসেন বলেন, টানা বর্ষণে শতাধিক কৃষকের সাড়ে ৬ হেক্টর জমি আউশ ধান পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়েছে। কৃষকের ২৪ হেক্টর জমিতে আমনের বীজ তলা ও সবজী ক্ষেত অতি বর্ষণে পানিতে ডুবে যায়। তবে অপ সিজিনে ১ একর জমিতে চাষকৃত তরমুজ ক্ষেত পানিতে তলিয়ে সম্পূর্নটাই বিনষ্ট হয়। সবকিছু মিলিয়ে ৫ শতাধিক প্রান্তি ও ক্ষুদ্র কৃষকদের ক্ষতির পরিমান অন্ততঃ ৫০ লক্ষাধিক টাকা।