আমিনুল ইসলাম হিরো, রায়গঞ্জ : গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় রোপা আমন ধান ও সবজিক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে উপজেলার হাজারো কৃষক এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
শনিবার (১ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ধামাইনগর, সোনাখাঁড়া, পাঙ্গাশি, ধুবিল, চান্দাইকোনা ও নলকা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ ফসলি জমির রোপা আমন ধান বাতাসে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। নিচু এলাকার ধান পানিতে তলিয়ে গেছে, আবার অনেক জমির গাছের গোড়া পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বেগুন, মরিচ, লাউ ও শাকসবজির ক্ষেতেও দেখা দিয়েছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।
ধামাইনগর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম, এখন সব ধান পানিতে ডুবে গেছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কী খাবো বুঝতে পারছি না।
একই এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে পানি না নামলে শুধু ধানই নয়, পাশের সবজিগাছও পচে নষ্ট হয়ে যাবে।
রায়গঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোমিনুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে উপজেলার প্রায় ১২০ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান এবং ছয় হেক্টর জমির সবজিক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে পড়ে যাওয়া ধানগাছ গুচ্ছ আকারে বেঁধে রাখতে, যাতে পচে না যায়। ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করে আমরা দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, বৃষ্টি ও বাতাসে তাদের বছরের পরিশ্রম ও স্বপ্ন ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখন রোদ উঠলে আর পানি কমলে হয়তো কিছুটা ফসল বাঁচানো সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছেন।
ধুনট
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষকের ক্ষতি নতুন কিছু নয়। তবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ক্ষতি অনেকাংশে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। বৃষ্টির পানি জমে থাকলে দ্রুত নিষ্কাশন, রোগ প্রতিরোধ ও সঠিক পরিচর্যা করলে হেলে পড়া ধানগাছও পুনরায় দাঁড়িয়ে ভালো ফলন দিতে পারে। এজন্য প্রয়োজন কৃষকদের সচেতনতা, সরকারি সহায়তা এবং স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ।
সম্প্রতি টানা দুই দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে বগুড়ার ধুনট উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও মাঝারি উঁচু জমিতে পানি জমে গেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ধান চাষিরা। বৃষ্টির পানিতে জমে থাকা আর্দ্রতা ও বাতাসের প্রভাবে অনেক জায়গায় কাঁচা ধানের গাছ হেলে পড়েছে। এতে কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গভীর উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা।
উপজেলার চৌকিবাড়ী, মথুরাপুর ইউনিয়নসহ আশেপাশের বিষ্ণুপুর, পাচথুপি, নছরতপুর, পীরহাটি, খাদুলীসহ অনেক গ্রামেই এমন চিত্র দেখা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অসংখ্য কৃষক। কৃষক শাহজাহান আলী, সিরাজুল ইসলাম, ফেরদৌস আলম, ফজলুল হক, গোলবার হোসেন, আমিনুল ইসলাম, আলামীন, মোতালেব হোসেন, আলী আকবর, বেলাল হোসেন, বাবলু সেখ, আব্দুর রশিদ ও হবিবর রহমানসহ অনেকে ধানক্ষেতের এমন বিপর্যয় সম্পর্কে বলেন, গাছ যদি পুরোপুরি সোজা অবস্থায় ফিরিয়ে আনা না যায়, ফলন কমে যাওয়ার পাশাপাশি যেমন বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে তেমনি সার, বীজ ও শ্রমের বিনিয়োগ ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কায় ধুনট উপজেলার ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের চোখে-মুখে নেমে এসেছে হতাশার ছাপ।