খুলনা একসময় পাটচাষে স্বর্ণযুগ পার করলেও সেই সুদিন এখন নেই। বছরের পর পর লোকসান গুনতে গুনতে বন্ধ হয়ে গেছে এ অঞ্চলের পাটকলগুলো। ফলে পাট চাষে আগ্রহ হারিয়েছে কৃষকরা। কমেছে উৎপাদন লক্ষমাত্রা। গত বছর জেলায় আবাদের লক্ষমাত্রা পূরণ হলেও এবার তা হয়নি। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সরকারি প্রণোদনা ছাড়া কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ দেখায় না।
জানা যায়, গেল বছর কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের বীজ দেয়া হলেও এবার তা দেয়া হয়নি। তবে পাট অধিদপ্তর থেকে জেলার সবচেয়ে বেশি পাট আবাদ হওয়া দুটি উপজেলার কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
খুলনা জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলার ৯টি উপজেলায় পাটের আবাদ হয় ১৪৪৭ হেক্টর। এর মধ্যে তোষা পাট ১৪৪২ হেক্টর, দেশী পাট ৫ হেক্টর। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পাট আবাদের লক্ষমাত্রা ১৪৫৭ ধরা হলেও এবার আবাদ হয়েছে ১২৫৭ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে তোষা পাট ১২২১ হেক্টর এবং দেশি পাট ৩৬ হেক্টর। লক্ষমাত্রা অনুযায়ী অর্জন ৮৭ শতাংশ।
সূত্রে আরো জানা যায়, চলতি অর্থবছরে রূপসা উপজেলায় পাটের আবাদ হয়েছে ২১ হেক্টর জমিতে, বটিয়াঘাটায় ৫ হেক্টর, দিঘলিয়ায় ৪৬ হেক্টর, ফুলতলায় ৯ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ৭৯৬ হেক্টর, তেরোখাদায় ১২৫ হেক্টর, পাইকগাছা ২৫২ হেক্টর, কয়রা ৩ হেক্টর। দাকোপ উপজেলায় গতবছর ৩ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হলেও চলতি বছর কোন পাট আবাদ হয়নি। অনুরূপ মেট্রোর মধ্যে দৌলতপুরে গত অর্থবছরে ১ হেক্টর জমিতে আবাদ হলেও এবার তা হয়নি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে রূপসা উপজেলায় পাটের আবাদ হয়েছিল ৩৬ হেক্টর জমিতে, বটিয়াঘাটায় ১৫ হেক্টর, দিঘলিয়ায় ৩০ হেক্টর, ফুলতলায় ১ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ৮৬৬ হেক্টর, তেরোখাদায় ১২০ হেক্টর, পাইকগাছা ৩৭২ হেক্টর, কয়রা ৩ হেক্টর। এবার প্রতি হেক্টর গড় ফলনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১১.৯৯ বেল। বা ২ হাজার ৭ শত ৪৩ মেঃটন।
জানা যায়, গত খরিপ মওসুমে কৃষি অফিস থেকে ১ হাজার কৃষককে ১ কেজি করে বীজ প্রণোদনা দেয়া হলেও এবার তা দেয়া হয়নি।
তবে জেলা পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার দুটি উপজেলা মধ্যে পাইকগাছা উপজেলায় ১ হাজার ৯ শত কৃষককে ১ কেজি করে পাটবীজ ও ৫ কেজি করে স্যার দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৭৫ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। অনুরূপ ডুমুরিয়া উপজেলায় চাষিদেরও প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
ডুমুরিয়ার এনামুল কবির এবার ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তিনি বলেন, অন্তত ১০ বিঘা জমিতে এবার পাট লাগানোর ইচ্ছা থাকলেও প্রচ- তাপমাত্রার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হোসেন পাটের আবাদ কম হওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, চলতি বছর পাট আবাদের সময় অতি মাত্রায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে চাষিরা ভালোভাবে আবাদ করতে পারিনি। আবার যখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে তখন আবাদেও আদর্শ সময় শেষ হয়ে গেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা সহকারি পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ভিত্তিক পাট এবং পাট বীজ সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীনে কৃষকদের রাসায়নিক সার, চাষ ও ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রণোদনা সরবরাহ করা হয়েছে। সার ও বীজপ্রাপ্ত নির্বাচিত পাট চাষিদের আধুনিক পদ্ধতিতে পাট চাষ ও পাট বীজ উৎপাদন, সার দেওয়া, কর্তন, জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো, বীজ সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণবঙ্গে তুলনামূলক পাট চাষ কম হয়। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও এবার তা না হওয়ার কারণ হিসেবে আমরা মনে করছি প্রণোদনার অভাব এবং পাট চাষের উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়া। তবে চাষীদের পাটবীজ সংরক্ষণ, বীজ পাট উৎপাদন, উঠান বৈঠকসহ নানা পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ ছাড়া ফরমাল ট্রেডিংয়ের উপর শতাধিক পাটচাষীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।