আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা : লবণাক্ততা, পানিবদ্ধতা, অনাবাদি জমিসহ মাছের ঘেরে উচ্চফলনশীল জাতের বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে ধান সংগ্রহের উৎসবে মেতে উঠেছে কৃষকরা। ফলনের পাশাপাশি বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে ফুটেছে হাসি। অন্যদিকে, ভাল মজুরি পেয়ে শ্রমিকরাও বেশ আনন্দিত। জেলার মানুষের খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ধান বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। কৃষকদের ভাষায়, বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করে এবার প্রকৃতির অনুকূল আবহাওয়া ও রোগবালাই কম থাকায় এমন ফলন সম্ভব হয়েছে। গত বছর যেখানে প্রতিমণ ধান বিক্রি হয়েছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায়, সেখানে এবার তা বেড়ে হয়েছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, উপকূলীয় এ জেলার বিভিন্ন ফসলি জমিতে ৮ থেকে ১৪ টিডিএস মাত্রার লবণাক্ততার উপস্থিতি রয়েছে। এ তীব্রমাত্রার লবণাক্ততার কারণে ফসল উৎপাদন প্রায় অসম্ভব। তবে এসব জমিতেও বিনা-১০, ৬৭ ও ৪৭ জাতের ধান আবাদ করে ভালো ফলন পাচ্ছে চাষিরা।

চলতি মৌসুমে জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে লবণসহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের বোরো ধান আবাদ হয়েছে, যা গত মৌসুমের তুলনায় চার হাজার হেক্টর বেশি। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ মৌসুমে জেলার সাত উপজেলায় ৭৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে লবণসহিষ্ণু জাতের ধান। আশাশুনি উপজেলার মাদারবাড়িয়া গ্রামের বোরো চাষি খোকন গাইন জানান, তার এলাকার অধিকাংশ জমিতে উচ্চমাত্রার লবণ থাকায় সব জাতের ধান চাষ করা যায় না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে কয়েক বছর ধরে লবণসহিষ্ণু জাতের বোরো ধান চাষ করছেন তিনি। চলতি মৌসুমে ১৫ বিঘা জমিতে লবণসহিষ্ণু ব্রি-৬৭ জাতের ধান চাষ করেছেন। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে এ জাতের ধান চাষ করে ২৭ মণ পর‌্যন্ত ফলন পেয়েছেন। তার গ্রামের অনেকেই এখন লবণসহিষ্ণু ব্রি-ধান চাষ করছেন বলেও জানান এ কৃষক। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সাতক্ষীরা আঞ্চলিক কার‌্যালয়ের প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, উপকূলীয় সাতক্ষীরায় দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন ঘটে চলেছে। এ পরিবর্তনকে গুরুত্ব দিয়ে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এরই মধ্যে ১৪টি লবণসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ব্রি ধান-৯৭, ৯৯, ৬৭ উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া উচ্চ ফলনশীল ১১৭, ১১৩ এবং ব্রি-৯ জাতের ধানের গবেষণাও প্রায় শেষের দিকে।

এ জাতের ধান বীজ শিগগিরই বাজারে আসবে। এসব জাত ১২-১৪ ডিএস পর্যন্ত লবণ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে, প্রতি বিঘায় ২৬-২৭ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রতি বছরই লবণসহিষ্ণু জাতের বোরা ধান উৎপাদন বাড়ছে। ২০২৪-২৫ মৌসুমে সাত উপজেলায় ৭৯ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। যার ২৫ শতাংশই লবণসহিষ্ণু। গত মৌসুমে জেলায় ৭৯ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়। এর মধ্যে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে লবণসহিঞ্চু জাতের বোরো ধান চাষ করা হয়। তবে এ মৌসুমে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে এ জাতের বোরো চাষ হয়েছে।