তৌফিক রুবেল, দাউদকান্দি (কুমিল্লা) : গত মৌসুমে আলুর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা আবারও আলু চাষে নেমেছেন। বিপুল লোকসানের ক্ষত কাটিয়ে ওঠার আশায় ধারদেনা ও ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে তারা জমি প্রস্তুত ও আলুবীজ বপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর আলুর উৎপাদন ভালো হলেও বাজারদর অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় সরকারি কোনো প্রণোদনা না পেয়ে শতাধিক কৃষক ও আলু ব্যবসায়ী বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শ্রমিকের মজুরি, সার, বীজ ও চাষাবাদ খরচ বেড়ে গেলেও কৃষকরা নতুন করে আলু চাষে ঝুঁকেছেন। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে প্রতিমণ আলুর খরচ পড়তে পারে আনুমানিক ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।চলতি মৌসুমে দাউদকান্দি উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিটেশ্বর ইউনিয়নের চন্দ্রশেখরদী, নোয়াদা, নৈয়াইর, কাদিয়ারভাঙ্গা, বিরবাগ গোয়ালী, তিনপাড়া; ইলিয়াটগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের রামপুর, বাঘারচর, নয়ানগর, কুশিয়ারা; দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি, ভাজরা, গঙ্গাপ্রসাদ; গৌরীপুর ইউনিয়নের সরকারপুর এবং সুন্দলপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ইতোমধ্যে অধিকাংশ জমিতে আলুবীজ বপনের কাজ শেষ পর্যায়ে।উচ্চমূল্যের কারণে অনেকে মানসম্মত বীজ আলু সংগ্রহ করতে না পেরে হিমাগারে সংরক্ষিত খাবার আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই উপজেলার সব এলাকায় আলু বপনের কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।বিটেশ্বর গ্রামের কৃষক কাওসার আলম বলেন, গত মৌসুমে আলুর দাম না পাওয়ায় কোল্ডস্টোরেজের ভাড়া দিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় অনেক আলু নষ্ট হয়ে যায়। ধার করে হলেও আবার চাষ করছি—ভবিষ্যৎ কী হবে জানি না।মোহাম্মদপুর গ্রামের বর্গাচাষি মো. সিরাজুল জানান, গত বছর এক কানি জমি বর্গা নিয়ে আলু চাষে খরচ হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলেও বাজারদর কম থাকায় লোকসান গুনতে হয়েছে। এবারও বাড়তি খরচ দিয়ে নতুন করে আলু চাষ শুরু করেছি।কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, গত মৌসুমে ১৫ কানি জমিতে আলু চাষ করে আশানুরূপ ফলন পেয়েও সঠিক সময়ে বিক্রি করতে না পারায় সব স্বপ্ন ভেঙে যায়। এবার ঝুঁকি কমাতে মাত্র ৬ থেকে ৭ কানি জমিতে চাষ করছি।আলু ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান জানান, গত বছর প্রায় ৪৭ লাখ টাকার আলু কিনে কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ করেন। পরিবহন, শ্রম ও সংরক্ষণ খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজিতে ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ১৮ টাকা। কিন্তু বাজারদর কমে যাওয়ায় ১৫ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হন, ফলে বড় অঙ্কের লোকসান হয়।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, গত মৌসুমে আলুর উৎপাদন ভালো হলেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার অতিরিক্ত খরচ বহন করে তারা নতুন করে আলু চাষে নেমেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য প্রণোদনা প্রদানের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে কৃষকরা উপকৃত হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কৃষি
দাউদকান্দিতে নতুন মৌসুমের আলু চাষে ফিরছেন কৃষকরা
গত মৌসুমে আলুর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা আবারও আলু চাষে নেমেছেন। বিপুল লোকসানের ক্ষত কাটিয়ে ওঠার আশায় ধারদেনা ও ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে তারা জমি প্রস্তুত ও আলুবীজ বপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
Printed Edition