মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান) : বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে কাউন চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে এ ফসলের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ এখনো হয়নি। কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, বাণিজ্যিকভাবে কাউন চাষের উদ্যোগ নিলে পাহাড়ের অর্থনীতির চিত্র পাল্টে যেতে পারে।
কাউন স্থানীয়দের কাছে ‘কৈন’ নামে পরিচিত। পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষসহ বাঙালিদের সামাজিক উৎসব ও অতিথি আপ্যায়নে কাউনের পায়েশের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এটি সুস্বাদু খাবার হিসেবে জনপ্রিয়। বিস্কুট তৈরিতেও কাউন ব্যবহৃত হয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই দানা জাতীয় ফসল থেকে আমিষ ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ হয়। কৃষি বিভাগ বলছে, ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।
স্থানীয় জুমচাষীরা সাধারণত বৈশাখে ধান বোনার সময় পাহাড়ি ঢালে কাউনের বীজ ছিটিয়ে দেন। বর্ষার পানি মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বীজ গজিয়ে ওঠে। দেখতে সরষে দানার মতো কাউনের গাছ পাঁচ থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। সবুজ পাতা ও শক্ত কা-ের কারণে সহজে নুয়ে পড়ে না।
কৃষি বিভাগ জানায়, প্রায় সব ধরনের মাটিতেই কাউনের আবাদ সম্ভব। তবে পানি না জমা বেলে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। সারিতে বীজ বপন করলে চারা পরিচর্যা সহজ হয় এবং ফলনও ভালো পাওয়া যায়। প্রতিবিঘা জমি থেকে গড়ে ৩৫০ কেজি পর্যন্ত কাউন উৎপাদন হয়। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি কাউনের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা।
১৯৮৯ সালে কৃষি বিভাগ ‘তিতাস’ নামের একটি উন্নত জাত অনুমোদন দেয়, যা রবি মৌসুমে ১১৫ দিনে এবং খরিপ মৌসুমে ৮৫-৯৫ দিনে পাকে।
আলীকদম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, “পাহাড়ের জুমচাষীরা সীমিত আকারে কাউন চাষ করেন। স্থানীয় কৃষকরা এখনো বাণিজ্যিকভাবে এগিয়ে আসেননি। তবে কাউন একটি পুষ্টিমানসমৃদ্ধ কৃষিপণ্য। কেউ উদ্যোগ নিলে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করবে।”