বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় আরেকটি যুগান্তকারী অগ্রগতি হিসেবে লবণাক্ততা সহনশীল, উচ্চ ফলনশীল উফশী বোরো ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী তিনটি নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। জাতীয় বীজ বোর্ডের (এনএসবি) ১১৪তম সভায় এই জাতগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই তিন জাতসহ এখন পর্যন্ত ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাতের সংখ্যা ১২১টি, যার মধ্যে ৮টি হাইব্রিড।
নতুন উদ্ভাবিত জাত ব্রি ধান-১১২ একটি লবণাক্ততা সহনশীল ও মাঝারি জীবনকালীন রোপা আমন ধান, এ জাতের ডিগপাতা প্রচলিত ব্রি ধান-৭৩ এর তুলনায় অধিক খাড়া, গাছের কাণ্ড মজবুত এবং ঢলে পড়া প্রতিরোধী, শীষপ্রতি গড় দানার সংখ্যা প্রায় ২১০টি, যা ব্রি ধান-৭৩ এর তুলনায় ৮০-৯০টি বেশি, এতে এহ১ধ জিন থাকায় শীষে দানার সংখ্যা বেড়েছে, হেক্টরপ্রতি ফলন ৪.১৪ থেকে ৬.১২ টন, জীবনকাল ১২০-১২৫ দিন, গাছের উচ্চতা ১০৩-১০৫ সেমি, চাল মাঝারি চিকন ও সাদা, ভাত ঝরঝরে, চারা অবস্থায় ১২ ডিএস/মি. পর্যন্ত তিন সপ্তাহ লবণ সহ্য করতে পারে এবং অংগজ বৃদ্ধি থেকে প্রজনন পর্যায় পর্যন্ত ৮ ডিএস/মি. মাত্রার লবণ সহ্য করে ফলন দিতে পারে, এই জাতটি সহজে ঝরে পড়ে না, আর জীবনকাল তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল কাটার পর সূর্যমুখী ও লবণ সহনশীল সরিষার আবাদ সম্ভব।
ব্রি ধান-১১৩ একটি উচ্চ ফলনশীল বোরো জাত, এটি জনপ্রিয় ব্রি ধান-২৯ এর আধুনিক বিকল্প হিসেবে ছাড়কৃত, দানার গড় আকৃতি মাঝারি চিকন ও সাদা, দেখতে অনেকটা নাজিরশাইল জাতের মতো, ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও সবুজ এবং ধান পাকলেও গাছ সবুজ থাকে, গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন, গাছের উচ্চতা ১০২-১০৫ সেমি, ১০০০টি পুষ্ট ধানের গড় ওজন ১৯.৪ গ্রাম, অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ, প্রোটিনের পরিমাণ ৮.৪ শতাংশ, ভাত ঝরঝরে, ফলন হেক্টরপ্রতি গড়ে ৮.১৫ টন এবং উপযুক্ত পরিচর্যায় ফলন বেড়ে ১০.১ টন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
ব্রি ধান-১১৪ একটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী বোরো জাত, এ জাতের জীবনকাল ১৪৯ দিন, গাছের পাতা গাঢ় সবুজ ও খাড়া, গাছ মজবুত এবং হেলে পড়ে না, হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৭.৭৬ টন হলেও সুনির্বাচিত পরিবেশে তা বেড়ে ১০.২৩ টন পর্যন্ত হতে পারে, দানা মাঝারি মোটা ও সোনালি বর্ণের, চালের অ্যামাইলোজ ২৭ শতাংশ ও প্রোটিন ৭.৭ শতাংশ, ভাত ঝরঝরে এবং সুস্বাদু, জাতটিতে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী চর৯ জিন রয়েছে এবং আর্টিফিশিয়াল ইনোকুলেশনে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ ক্ষমতা (স্কোর-০) প্রদর্শন করেছে।
নতুন তিনটি জাত দেশের বিভিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতি উপযোগী করে তৈরি হওয়ায় এগুলো কৃষকদের জন্য লাভজনক, পরিবেশ সহনশীল এবং কৃষি উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টিকারী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।