মোঃ রফিকুল ইসলাম (কালিগঞ্জ) সাতক্ষীরাঃ বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষিই বাংলাদেশের কৃষি মূল ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। আর এ কারণে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির উল্লেখযোগ্য অবদান ও সাফল্য সর্বজনস্বীকৃত ও আজ বিশ্বের কাছে পরিচিত। কৃষি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে যে সকল খাত সচল রেখেছে, তার মধ্যে কৃষি অন্যতম। কর্মসংস্থান ও পন্য রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সার্ভিস এর কৃষি কথা সূত্রে প্রকাশ, ”শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ বিশ্বের ধান উৎপাদনে তৃতীয়, চাল উৎপাদনে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ, কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, আম উৎপাদনে সপ্তম, ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, ছাগল উৎপাদনে বিশ্বের চতুর্থ ও ফসলের জাত উদ্ভাবনে শীর্ষে বাংলাদেশ।”
কালিগঞ্জের দক্ষিণ পশ্চিম দিগন্ত জোড়া কৃষি জমি কমে যাওয়ার বিষয়ে নানা কারণ রয়েছে বলে বিভিন্ন পেশা জীবি মানুষ মতামত প্রকাশ করেছেন। প্রধান কারণ হিসাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন। তারা বলেন, জনর্সখ্যা বাড়ছে, জমি তো আর বাড়ছে না। এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার সব ধরনের চাহিদা মেটাতে কৃষি জমিকে অকৃষি খাতে ব্যবহার করার ফলে কৃষি জমি কমছে।
উপকূলের সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কালিগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে বর্তমানে মোট জনসংখ্যা ৩,০৫,৪৯৫ জন। এটার হলো ২০১১ সালে আদম শুমারীর গণনা অনুযায়ী। জনসংখ্য বৃদ্ধির হার ০.৯৪% । এ উপজেলাতে আরো কত জনসংখ্যা বেড়েছে তার হিসাব এখনও হয় নি। শুধু সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ নয় সমগ্র বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বৃদ্ধি প্রাপ্ত জনসংখ্যার চাহিদা মিটাতে কৃষি জমি ব্যবহার করে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘর বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি। অধিক লাভের আশায় খনন করা হচ্ছে জলাশয় এবং নিচু জাতীয় আবাদী জমির চারি ধারে ভেঁড়ি দিয়ে নির্মান করা হচ্ছে মৎস্য ঘের। কালিগঞ্জ দুই ধরণের মৎস্য ঘের আছে এক মিষ্টি পানি, দুই লোনা পানির ঘের। যার ফলে যে সকল উচু জমির চারি পাশে ঘের তাই সে মিষ্টি পানির ঘের হোক আর লোনা পানির ঘের হোক ওই সকল উচু জমিতে আগের মতো আর ফসল হচ্ছে না। কারণ ঘেরের পানি মাটির তলা দিয়ে চোপায়ে উচু জমিতে হচ্ছে কুয়ে লোনা অথ্যাৎ অল্প লোনা। এভাবে কৃষি জমিকে অকৃষি খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলা এটি। এই উপজেলার আয়তন ৩৩৩.৭৯ বর্গকিলোমিটার।
এক লবনাক্ত কালিন্দী ও ইছামতি নদীর জোয়ারে প্লাবন সমভূমি যা ফ্যাকাশে বাদামী এবং পলি দোঁ-আশ কাদামাটি। দুই লোনা ঘেরে মৎস্য চাষের জন্য ইছামতি, কালিন্দী নদী থেকে জোয়ারে পানি তোলা হয়। যার ফলে চৈত্র মাসে উচুভূমি, নিচুভুমি, সমভূমি লোনা পানিতে মাটি অ্যাসিড সালফেট তৈরি হয় যা ধূসর পলিময় দোঁ-আশ কাদামাটি ফসলের অনুপযোগী হয়। এখানকার আবহাওয়া কিছু কিছু সময় মৃদু আবার কিছু কিছু সময় লোনা। কালিগঞ্জে মোট খানার সংখ্যা ৭৮, ৯৯০ টি।
কালিগঞ্জ উপজেলার অর্থনীতি প্রধানত কৃষি নির্ভর। জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান, স্থানীয় উচ্চ ফলনশীল ধান, শাকসবজি, ডাল, মসলাসহ অন্যান্য খাদ্য শস্য উৎপাদন হয়ে থাকে। খাদ্য শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদনে জেলায় ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলায় লবন পানির চিংড়ী চাষ ব্যাপক ভাবে হয়ে থাকে। অর্থনীতি কর্মকান্ড কৃষি হলেও অকৃষিখাতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড রয়েছে।
কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী উপজেলায় মোট জমির পরিমাণ ৩৩,৪২১ হেক্টর। নীট জমির পরিমাণ ২৩,৭৪৫ হেক্টর, আবাদ যোগ্য জমির পরিমান ১০৪০.৫৫ একর। এক ফসলী জমির পরিমাণ ১০,৪৪০ হেক্টর, দুই ফনলী জমি ১৩,৯৭২ হেক্টর, তিন ফসলী জমি ১৭,৯৮৫ হেক্টর, অকৃষি জমির পরিমান ২০২৫.৪০ একর। খাস জাম ৩০৬৫.৯৫ একর, পুকুর-দিঘি আয়তন ১০৯৫.০০ হেক্টর, ধান ক্ষেতে মাছ চাষ ১৫২৫.৭০ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় মোট বাগদা ঘেরের সংখ্যা ১৫০০০টি যার আয়তন ১৬০০০ হেক্টর।