বিরামপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা : বিরামপুর উপজেলায় গো-খাদ্য হিসেবে নেপিয়ার ঘাস বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করে কৃষকেরা ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।

নেপিয়ার ঘাস একবার লাগানো হলে ৩/৪ বছর পর্যন্ত উৎপন্ন করা যায়। তথ্যসূত্রে এ ঘাস গরুর দুধ বৃদ্ধি করে মোটাতাজাকরণে সহায়তা করে। প্রতি কেজি কাঁচা ঘাসের শুষ্ক পদার্থ ২৫০ গ্রাম, জৈব পদার্থ ২৪০ গ্রাম, প্রোটিন ২৫ গ্রাম ও ২.৩ মেগাজুল বিপাকীয় শক্তি রয়েছে।

নেপিয়ার ঘাস বছরে যেকোনো সময়ে চাষ করা যায় । তবে উত্তম সময় হচ্ছে ফাল্গুন ও চৈত্র মাস। দেশে পশু খাদ্য হিসেবে সবুজ ঘাসের ঘাটতি রয়েছে। দুধের পূর্ব শর্ত হচ্ছে কাঁচা ঘাস । দুধ বৃদ্ধি ও মাংস বৃদ্ধিতে নেপিয়ার ঘাসের বিকল্প নেই। বিরামপুর উপজেলায় খামারিদের পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জে প্রায় বাড়িতেই ২/১টি গরু থাকে। গরুর প্রধান খাদ্য খড় হলেও হারভেস্টার মেশিনের দ্বারা ধান কর্তন করায় খড় সংরক্ষণ করা যায় না বলে কৃষকেরা জানান। ফলে খড়ের সংকট পূরণে গো খাদ্যে হিসেবে কেউ ৫ কেউ ১০ কেউবা ৩০/৪০ শতক জমিতে নেপিয়ারে ঘাস চাষ করেছেন।

নেপিয়ার ঘাসের চাহিদা থাকায় বাণিজ্যিকভাবে কেউ কেউ দুই থেকে ৫ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করে বাজারজাত করণে অনেক লাভবান হচ্ছেন। দেখা যায় প্রায় মানুষ বাজার তালিকার মধ্যে বাজার শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুই চারটি নেপিয়ার ঘাসের আঁটি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। উপজেলায় পৌর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চাষি আসাদুল ইসলাম জানান, তিনি পঞ্চাশ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। ঘাসের চারা সারিবদ্ধ ভাবে লাইন থেকে লাইন ৭০ সি এম কাটিং থেকে কাটিং ৩৪ সিএম দূরে চারা রোপন করেছেন ।এরপর সব ধরনের জৈব সার সেচ ও পরিচর্যা করে চারা লাগানোর বিশ দিন পর ঘাস কর্তন শুরু করেছেন। তিনি আরো জানান ঘাস কর্তনের পর যে মোথা থাকে সেই মোতা থেকে ২০ দিনের মধ্যে ৬ থেকে ৭ ফিট লম্বা হলেই আবার কর্তন করা যায়। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঘাস কর্তন করা যায় তিন থেকে চার বছর যাবৎ। ঘাস যত কর্তন করা হয় মোতা ও ঘাসের ডাটা তত মোটা হয়। তার ৫০ শতক জমিতে ঘাস চাষ করে নিজের খামারে চাহিদা পূরণ করে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

বিরামপুর পশুর সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায় উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের আনিসুর রহমান, পৌরশহরের আলী আকবর ওবায়দুল কমিশনার জোতবানি মমিনুর রশিদ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন। তারা জানান, বাজার খরচের তালিকার মধ্যে থাকে নেপিয়ার ঘাস। শুধু গরুর খাদ্য হিসেবেই নয় এ ঘাস ছাগল- ভেড়াও খায় । দেশে গোচারণ ভূমির অভাব। যাদের বাড়িতে দুই একটি গরু ছাগল আছে তারা দুই-চারটি আঁটি ক্রয় করে নিয়ে যায় । প্রতিটি আঁটি ৫ থেকে ৬ টাকায় বিক্রি হয়। অন্য ফসলের চেয়ে ঘাস চাষে প্রচুর লাভ। নেপিয়ার ঘাস চাষ করে উপজেলার অনেক চাষি তার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।