৫ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচার হাসিনার পলায়নের পর তার দোসররাও আত্মগোপনে যান। এরমধ্যে অন্যতম দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়েছেন। এরমধ্যে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানিয়ে লূটেছেন শতকোটি টাকা। মজার ব্যাপার হলো তিনি নিজে আত্মগোপনে গেলেও তার দোসর ও ক্যাশিয়ার খ্যাত নূর মোহাম্মদ মামুনকে বানিয়ে যান প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান। ফলে সাঈদ খোকনের সমস্ত অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হলেও তার সকল লেনদেন ও অর্থ আদান প্রদান হচ্ছে ক্যাশিয়ার মামুনের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।

জানা গেছে, সাঈদ খোকনের ক্যাশিয়ার খ্যাত মামুনের রয়েছে আইডিয়াল প্রোডাক্ট এবং আইডিয়াল হাউজিং। এই দুই প্রতিষ্ঠানে সাঈদ খোকনের সমস্ত টাকা পয়সা বিনিয়োগ হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। হাসিনর পলায়নের পর গত কয়েক মাসে আওয়ামী দোসরদের ব্যবসাবাণিজ্য মন্দা থাকলেও আইডিয়াল প্রোডাক্ট ও আইডিয়াল হাউজিংয়ের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা লেনদেন সন্দেহের সৃষ্টি করে। একইসাথে মামুনের ঘন ঘন আমেরিকা সফর সবার নজর কেড়েছে বলে অফিসে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাতে অনেকেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে তিনি সাঈদ খোকনের টাকা পাচারে লিপ্ত রয়েছেন। ইসলামী ইন্সুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাধে মামুন তার স্ত্রী ও ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়কে পরিচালককে অন্তভূক্ত করেছেন। একই কাজ করেছিলেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন।

প্রসঙ্গত ইসলামী ইন্সুরেন্সে সাঈদ খোকন এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে ৯জনকে (স্ত্রী, মেয়ে, ভগ্নিপতিসহ আরও দু’জনকে) পরিচালক বানিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। ফ্যাসিস্ট আমলে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকদের বাদ দিয়ে তিনি তার পরিবার ছাড়াও সুবিধাভোগীদেরকে বসিয়েছেন। বিগত ১৪ বছর ধরে সাইদ খোকন অবৈধভাবে এই কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। ঢাকা দক্ষিনের মেয়র থাকা অবস্থায়ও তিনি এই কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন।

তিক্ত বাস্তবতা হলো জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় অর্থযোগান ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে নূর মোহাম্মদ মামুনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তিনি ইসলামী ইন্সুরেন্সের মতো প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। এতে আশ্চর্য্য হয়েছেন প্রতিষ্ঠানের কর্মরতরা।

জানা গেছে সাইদ খোকন যখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের নির্বাচন করেন ; তখন মিস্টার নূর মোহাম্মদ মামুন তার আইডিয়াল প্রোডাক্ট থেকে প্রায় এক কোটি টাকার পোস্টার বিনামূল্যে ছাপিয়ে দেন। বিনিময়ে তার স্ত্রী এবং ছেলেকে কোম্পানির পরিচালক বানানোর আব্দার করেন। কথা রক্ষার জন্য অন্য উদ্যোক্তাদের বাদ দিয়ে মামুনের স্ত্রী ও এক নিকটাত্মীয়কে পরিচালক করেন সাঈদ খোকন।

জানা গেছে সাঈদ খোকনের ক্যাশিয়ার হওয়ায় তার সমস্ত অবৈধ সম্পদ ঢুকেছে নূর মোহাম্মদ মামুনের কোম্পানিতে। ফলে অল্প কিছুদিরেন ব্যবধানে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যান মামুন। খোদ মামুনের প্রতিষ্ঠানের স্বীকারোক্তি হলো- আগে কেবল আইডিয়াল প্রোডাক্টের ব্যবসা করতেন। সাঈদ খোকনের সাথে সম্পর্কের পর সে বর্তমানে আইডিয়াল প্রোপার্টিসের নামে জমির ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে মামুনের রয়েছে বিশাল আকারে ১০০ ফুট রাস্তার পাশে হাউজিং সোসাইটি। প্রাপ্ত তথ্য বলছে এই জমির দাম হাজার কোটি টাকা। হাউজিং কোম্পানিতে সাঈদ খোকন তার অবৈধ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে ৫ আগস্টের পর তিনি তার ক্যাশিয়ার মামুনকে ভাইস চেয়ারম্যান করে যান।

আইডিয়াল প্রোডাক্ট হিসাব বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক সংগ্রামকে জানিয়েছেন, আইডিয়াল হাউজিং এর অ্যাকাউন্স থেকে অল্প সময়ের মধ্যে শত শত কোটি টাকার লেনদেন এর আগে কখনো হয়নি। এই টাকা হালাল করার জন্য নূর মোহাম্মদ মামুন কয়েকবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। সূত্রগুলো বলছে,সাঈদ খোকনের সকল অবৈধ টাকা এবং জমি মামুনকে দিয়ে বৈধ করে রেখেছেন। যেমনটি আওয়ামী লীগের অধিকাংশ মন্ত্রী এমপিরা করেছেন।

অথচ আইনে বলা আছে তিনি একইসময়ে দুই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। ভূয়া ক্লেইম (দাবি) বানিয়ে কোম্পানি থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আইডিআরএ বা ইন্সুরেন্স কৃর্তৃপক্ষের বিধি অনুযায়ী কোন কোম্পানি ভার্চুয়াল মিটিং করতে পারবে না। অথচ

বিগত দুই বছর ধরে সাঈদ খোকন একটি মিটিংও সরাসরি করেননি। আর নূর মোহাম্মদ মামুন আমেরিকায় থেকে অফিস পরিচালনা করেন। অভিযোগ রয়েছে তিনি যথাযথ কারণ ছাড়াই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপেশাদার আচরণ করেন।

নূর মোহাম্মদ মামুন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এব্যাপারে নূর মোহাম্মদ মামুনের ব্যক্তিগত সহকারী এবং আইডিয়াল প্রোডাক্ট এর কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেনকে তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে তিনবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তার উত্তর দেননি।