ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের দিকনির্দেশনায় এগিয়ে চলেছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। সম্প্রতি বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ও অডিট ফার্মের নিরীক্ষায় উঠে আসে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের নিয়োগের কিছু অসঙ্গতিপূর্ণ চিত্র।
নিরীক্ষকদের এই পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শেও প্রেক্ষিতে যথাযথ পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৪১৪ জন কর্মকর্তাকে মূল্যায়ণের পরীক্ষার আওতায় আনা হয়। নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) এর মাধ্যমে পরিচালিত পরীক্ষায় ৮৬৪ জন উত্তীর্ণ কর্মকর্তাকে চাকুরীতে বহাল রাখা হয়। পরীক্ষায় নূন্যতম নম্বর অর্জনে ব্যর্থ অবশিষ্ট ৫৪৭ জনকে ব্যাংকের চাকরি বিধি এবং বাংলাদেশ শ্রম আইনের আলোকে সম্মানজনক ও মানবিক প্রক্রিয়ায় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩ জন কর্মকর্তা পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওযার পরবর্তী সময়েই চাকুরি হতে ইস্তফা প্রদান করেন। ব্যাংকের জনসম্পদের মানোন্নয়ন এবং ভবিষ্যতের জন্য আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংককে একটি সুদৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড় করানোই মূলত এ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য। তবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ না হওয়া এইসব চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা গত ২৮ জুলাই সকাল থেকে আকস্মিকভাবে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সম্মুখে আন্দোলনের নামে অবস্থান শুরু করেন। ওইদিন থেকেই তারা রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ে আল-আরাফাহ্ টাওয়ারের প্রবেশদ্বার অবরুদ্ধ করে রাখেন। ভবনের সম্মুখে রিক্সায় মাইক স্থাপন করে দিনভর শোরগোল ও মারমুখী আচরণ করতে থাকেন। এতে দিনের পর দিন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও একই ভবনে অবস্থিত ব্যাংকের হেড অফিস কর্পোরেট শাখার ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা একইভাবে প্রধান কার্যালয়ের প্রবেশদ্বার তারা অবরুদ্ধ করে রাখেন। গ্রাহকসেবা সচল রাখতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী ও কর্মকর্তাগণ বাধ্য হয়েই পার্শ্ববর্তী সুরমা টাওয়ার ভবনে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। উস্কানিমূলক আন্দোলনের বিপরীতে ব্যাংকের এমন শান্তিপূর্ণ অবস্থান মেনে নিতে পারেননি আন্দোলনকারীরা। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে চাকরিচ্যূতদের একটি দল হঠাৎ করেই সুরমা টাওয়ারে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালান। তারা ব্যাংকের ৩ জন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এইচআর হেডকে গাড়িতে ওঠার সময় বেশ কিছু সময় ধরে অবরুদ্ধ রেখে হেনস্থা করেন। একই সাথে তারা ব্যাংকের এইচআর হেডকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে লাঞ্ছিত ও আহত করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে আল-আরাফাহ্ টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মীরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তাদের ওপর চড়াও হন। এ সময় দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ব্যাংকের পক্ষে এইচআর হেডসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। গুরুতর আহতদের ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখার এ ঘটনায় পল্টন থানায় ইতোমধ্যেই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অনভিপ্রেত ও মর্মান্তিক এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলা হয় আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি কর্তৃপক্ষ তাদের চলমান সংস্কার কার্যক্রম, আইনগত প্রক্রিয়া এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য তত্ত্বাবধায়ক সংস্থার নির্দেশনা পরিপালনে কোনো অবস্থাতেই পিছুপা হবে না। এই পদক্ষেপগুলো ব্যাংকের স্থায়িত্ব¡, শৃঙ্খলা, গ্রাহকসেবা ও সুনাম রক্ষায় অপরিহার্য, যা কোনো চাপ, ভয়ভীতি বা অবৈধ প্রভাব দ্বারা বন্ধ করা যাবে না। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।