ঢাকায় এক সভায় ব্যাংকার, অর্থনীতি ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও সরকারি কর্মকর্তারা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে তুলে ধরেন। তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রবণতার পরিবর্তন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ট্যারিফ চাপ এবং বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে উল্লেখিত বাস্তবতাগুলো বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
বুধবার ইন্টারন্য্শানাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশ (আইসিসিবি)-এর আয়োজনে “গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ট্রেডস এন্ড রির্ফস: ইম্লিকেশন ফর বাংলাদেশ” শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা-আইসিসি এবং ডব্লিউটিও কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আইসিসি বাংলাদেশর প্রেসিডেন্ট মাহবুবুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে যেসব ট্যারিফ আরোপ করতে যাচ্ছে, সেগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে রপ্তানি আয় কমে যাবে, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেখা দেবে এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে। তাই আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দ্রুত সংস্কার জরুরি। তিনি বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে গঠনগত দুর্বলতা ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে ২.৯ ট্রিলিয়ন টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যার প্রায় অর্ধেকই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে।
আইসিসিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে আজাদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফের প্রভাব মোকাবেলায় আইসিসি ও ডব্লিউটির হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোর বীমা দাবি নিষ্পত্তির বিষয়েও তারা যেন নজর দেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে ডলার রেট উন্মুক্ত করার পরামর্শ দেন।
আইসিসি গোব্লাল ব্যাংকিং কমিশনের চেয়ারম্যান ফ্লোরিয়ান উইট বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন পুনঃবিনিয়োগ এবং খেলাপি ঋণ কমানো জরুরি। তিনি ব্যাংক একীভবনের কথা বলেন, যাতে বড় ও স্থিতিশীল ব্যাংক গড়ে ওঠে। ইসলামী ও দুর্বল বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য ফরেনসিক অডিটের পরামর্শও দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসাইন চৌধুরী বলেন, সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তবে এর ফলাফল মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করে।
ঢাকা ব্যাংক এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, সব পক্ষ একসঙ্গে কাজ করলে বাংলাদেশ পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, গোব্লালাইজেশন ২.০ আগের চেয়ে অনেক ভিন্ন হবে, যেখানে ছোট দেশগুলোর পক্ষে শুধু প্রতিক্রিয়া জানানোই সম্ভব।
এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মাহবুব উর রহমান বলেন, বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন বদলে যাচ্ছে এবং দক্ষিণ-দক্ষিণ বাণিজ্য বাড়ছে। এলসি-ভিত্তিক আমদানি এবং চুক্তিভিত্তিক রপ্তানির ভারসাম্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবিব বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সমস্যাগুলো ভিন্ন ধরনের, তাই সরাসরি বিদেশি মডেল অনুসরণ করা যাবে না। তবে কিছু ব্যাংক ও ব্যবসার উদাহরণ অনুসরণযোগ্য।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের বিনিয়োগ কর্মকর্তা বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, ব্যাংক খাতের অনেক দুর্বলতাই দেশের অভ্যন্তরেই তৈরি। তাই বিশ্বব্যাপী যা-ই হোক, সরকারের ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংস্কার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।