গণশুনানি ছাড়া সরকারি এলপি গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বিইআরসি আইন লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এ জন্য কমিশনের পদত্যাগের দাবি করেছে সংস্থাটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম। পাশাপাশি জ্বালানির সুশাসন নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানায় ক্যাব।

জ্বালানি খাতের শৃঙ্খলা নিশ্চিতে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, বিগত সরকারের আমলে জ্বালানি খাতে সবচেয়ে বেশি লুটপাট হয়। প্রয়োজন না হলেও গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে বারবার। যার কুফল এখন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে জনগণকে। বিদ্যুতের অবকাঠামোর অগ্রগতি হলেও দুর্নীতির সমস্যা এখনো রয়ে গেছে।

একজন আলোচক বলেন, ‘১৫৫ টা কুইক রেন্টাল পাওয়ারের ব্যবস্থা করা হলো। সেখানে কোনো টেন্ডার হলো না। এর মাধ্যমে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে কিভাবে টাকা লুটপাট হয়েছে।’

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, গণশুনানির মাধ্যমে এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণে হাইকোর্টের আদেশ থাকলেও বিইআরসি তা মানছে না। আইন লঙ্ঘন ও আদালত অবমাননার জন্য বর্তমান কমিশনকে অপসারণ করতে হবে। তা না হলে বিইআরসির বিরুদ্ধে আদালতে যাবে ক্যাব।

এম শামসুল আলম বলেন, ‘সরকার যেভাবে এ সেক্টর চালাচ্ছে, এখনও আগের সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে। এটা যে ঠিক না, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও আমি মনে করি সরকার যে ইচ্ছা করে করছে তা আমার কাছে মনে হয় না। কারণ এই সরকারের কোনো স্বার্থ থাকার কথা না।অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সেবাখাতে রূপান্তরের দাবিও জানায় ক্যাব।

শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৯৮ শতাংশ পরিবারেই বিদ্যুৎ রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ পাওয়া মানেই জ্বালানি সুবিচার নয়। অনেক গ্রামীণ ও নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠী এখনও ঘন ঘন লোডশেডিং ও ভোল্টেজ সমস্যায় ভোগেন ও বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনেন। বাংলাদেশে জ্বালানি সুবিচার সংকট কেবল একটি কারিগরি সমস্যা নয়— এটি অধিকার, সাম্য ও সুশাসন ব্যবস্থার প্রশ্ন। এটি আমাদের ভাবতে বাধ্য করে যে, কীভাবে জ্বালানি উৎপাদন, আমদানি, বণ্টন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। সরকার অবকাঠামো ও সংযোগে অগ্রগতি অর্জন করলেও, গঠনগত সমস্যাগুলো এখনও রয়ে গেছ। দুর্নীতি, ব্যয়বহুল সেবা, পরিবেশ ধ্বংস ও বর্জনমূলক নীতি সেসব মানুষকে প্রান্তিক করে দিচ্ছে, যাদের জন্য জ্বালানি উন্নয়ন বা রূপান্তর হওয়া উচিত। নইলে সে রূপান্তর ন্যায্য হয় না, জ্বালানি সুবিচার ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। একটি দক্ষ অ্যাকাডেমিক ও গবেষণা সম্প্রদায় যদি এআই-ভিত্তিক সমাধানে অবদান রাখে এবং তা ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে সরকার জ্বালানি খাত ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। এতে জনগণের জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণ হবে এবং জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত হবে।

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু।