অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তির লক্ষ্যে দর কষাকষিতে বাংলাদেশ দুর্বল। এক্ষেত্রে আমাদের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ-মার্কিন ট্যারিফ চুক্তি : কীভাবে বাণিজ্য সুবিধা হতে পারে’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএস-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস।
সেমিনারে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বাণিজ্য বিনিয়োগ বাড়াতে হলে এক্ষেত্রে দরকষাকষিতে আমাদের দক্ষতা জরুরি। আমরা বাণিজ্য খাতের দরকষাকষিতে দুর্বল। তিনি বলেন, আমরা সংস্কার চাই। সবক্ষেত্রেই সংস্কার আনার চেষ্টা করছি। বাণিজ্য খাতে সংস্কার আনতে সমন্বিত অনলাইন সেবা চালু করা হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ছয় মাসের নোটিশে শুল্ক নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ সফল হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের পণ্য কেনার সুযোগ কম। তবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চাই। সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন লাখ টনেরও বেশি গম আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের পণ্য রপ্তানি বাড়াতে হলে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে।
সেমিনারে আলোচকরা বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ১ আগস্ট থেকে শুল্ক ২০ শতাংশে কমাতে সফল হয়েছে। পারস্পরিক শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে কমানোকে বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের পারস্পরিক শুল্ক হার তার এশিয়ান প্রতিযোগী যেমন ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার অনুরূপ এবং এটি মিয়ানমার ও ভারতের মতো কিছু প্রতিবেশীর তুলনায় অনেক কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাজার বিশেষ করে পোশাক শিল্পের জন্য এ চুক্তি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হলে বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এ শুল্ক চুক্তির সুবিধা সর্বাধিক করার জন্য বাংলাদেশকে তার বাণিজ্য বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন দিক মোকাবিলা করে একটি বিস্তৃত কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবর্তিত এ শুল্ক যুদ্ধের ভবিষ্যৎ গতিপথ অনিশ্চিত রয়ে গেছে। মার্কিন শুল্ক দ্বারা সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী এবং বিশেষজ্ঞদের তাৎক্ষণিক মনোযোগ দাবি করে। সেমিনারে তিনটি উপস্থাপনা প্রদান করা হয়। উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন বিআইআইএসএস গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) অধ্যাপক ড. গোলাম রসুল এবং বিজিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইনামুল হক খান। আরও বক্তব্য রাখেন বিআইআইএসএস’র গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, কূটনৈতিক মিশন, গণমাধ্যম, গবেষকরা, শিক্ষাবিদ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা এবং ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্বরা সেমিনারে অংশ নেন।