জবি সংবাদদাতা: এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢুকে কর্তব্যরত ডা. মৃদুল ও সিনিয়র স্টাফ নার্স মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর উপর হামলাকারী বিএনপি নেতাকর্মীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে ন্যাশনাল নার্সেস ফোরাম।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সংগঠনটির অফিস সম্পাদক জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। একইসাথে হামলার তীব্র নিন্দা ও অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিও জানানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে সূত্রাপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমানের অনুসারীরা এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে ঢুকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের মারধর শুরু করেন।
এসময় সিনিয়র স্টাফ নার্স মোস্তাফিজুর রহমান বাবু গুরুতর আহত হন। এছাড়াও তাদের হামলায় আরও কয়েকজন আহত হন। তারা হলেন- হাসপাতালটির আইসিইউতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মৃদুল, আইসিইউ সিকিউরিটি আব্দুর রহিম, দায়িত্বরত কর্মচারী মো. মোশাররফ হোসেন (৪৫), মো. সুজন হোসেন (৩২) ও মো. জাহিদ হাসান (২৫)।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে তিনটায় মোস্তাফিজুর রহমান (বাবু) যখন পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন সূত্রাপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমানের একজন রোগী ভর্তি ছিল। রোগীকে ড্রেসিং করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পরে অবস্থার অবনতি হয়। রোগীর অবস্থা অবনতি হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক রোগীকে আইসিইউ পাঠায় এবং রোগী সেখানে মারা যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিএনপি নেতা আজিজের অনুসারী ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের মারধর করে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, আমাদের ওপর সন্ত্রাসী আজিজ তার দল-বল নিয়ে নির্মম হামলা করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। যাতে আর কেউ হাসপাতালে ঢুকে এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে।
ন্যাশনাল নার্সেস ফোরামের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্য সেবার মতো একটি সংবেদনশীল জায়গায় নার্স নির্যাতনমূলক আচরণ কর্ম পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে এবং রোগীদের সেবার মানকেও ব্যাহত করে। একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের প্রতি এই ধরনের সহিংস আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের ঘটনা হাসপাতালের কর্মপরিবেশকে দুর্বল করে এবং নার্সদের নিরাপত্তা ও আত্মবিশ্বাসকে বিপন্ন করে।
আমরা আশা করি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং ভবিষ্যতের জন্য এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল নার্সেস ফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ড. মো. ইউনুছ আলী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতে নার্সদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেবা দিতে গিয়ে নার্সদের উপর এমন অমানবিক আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ শীঘ্রই এই ঘটনার যথোপযুক্ত বিচার করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবাখাতের নিরাপত্তা ও মান উন্নয়নে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।
এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সূত্রাপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, আমি নিজে হাসপাতালের বোর্ড মেম্বার। আমি কেন হামলা করবো? কে বা হামলা করেছে, আমি জানি না। তবে আমার কোন লোকজন হামলা করেনি।
ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ডা. ইফফাত আরা বলেন, আমি এখন ছুটিতে আছি। কোন কথা বলা দরকার হলে অফিসে এসে বলো।