মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর নতুন করে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় এখনো সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

বিদ্যমান ১৬.৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে এই নতুন শুল্ক যুক্ত হয়ে কার্যকর হার দাঁড়াবে ৩৬.৫ শতাংশ। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এই তথ্য জানিয়েছে।

বিশ্ববাজারে চলমান প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় এই হার তুলনামূলক কম। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান পাঁচটি রপ্তানি পণ্য—ট্রাউজার, নিটেড পোলো শার্ট, ওভেন শার্ট ও ব্লাউজ, সোয়েটার এবং অন্তর্বাস—মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ।

এগুলোর অধিকাংশেই তুলার ব্যবহার বেশি, যা সিনথেটিক পোশাকের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে কম শুল্কের আওতায় পড়ে। এ কারণেই ভিয়েতনাম ও চীনের তুলনায় বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো রপ্তানি পণ্যে যদি ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার হয়, তবে সেই অংশের ওপর পাল্টা শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে তৈরি ১০ ডলারের একটি শার্টে ২০ শতাংশ মার্কিন তুলা ব্যবহার হলে, শুল্ক শুধু বাকি ৮ ডলারের ওপরই ধার্য হবে। অনেক রপ্তানিকারক ইতোমধ্যেই ৪০ শতাংশ পর্যন্ত মার্কিন তুলা ব্যবহার করছেন, ফলে তাদের জন্য কার্যকর শুল্ক হার আরও কম হবে।

প্রতিযোগী দেশগুলোর পরিস্থিতি

যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বাজারে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের বাজার হিস্যা ১৮.৯ শতাংশ। তাদের ওপরও ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক যুক্ত হয়েছে, তবে সিনথেটিক পোশাকে আগে থেকেই গড়ে ৩২ শতাংশ শুল্ক থাকায় কার্যকর হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এছাড়া চীনের কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় অতিরিক্ত ৪০ শতাংশ শুল্কের ঝুঁকিও রয়েছে।

ভারতের বাজার হিস্যা ৫.৯ শতাংশ হলেও রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে দেশটির ওপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে কার্যকর শুল্ক হার দাঁড়িয়েছে ৬৬.৫ শতাংশে। চীনের ক্ষেত্রে কার্যকর হার ৫৫ শতাংশ, এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্ক আলোচনা অনিশ্চিত থাকায় এই হার আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের সম্ভাবনা

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৮৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি বাজারে বাংলাদেশের অংশ ছিল ৯.৩ শতাংশ। শুল্কে তুলনামূলক সুবিধার কারণে এই হার আরও বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। মার্কিন ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতারা কম শুল্কের জন্য বাংলাদেশকেই বেশি প্রাধান্য দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বলেছেন, শুল্কের এই হার আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পোশাকের পাশাপাশি জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিও বাড়বে, কারণ আমরা তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে আছি।