রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক করিডোর উন্নয়নের গতি বাড়াতে এবং এতে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সোমবার ‘বাংলাদেশে অর্থনৈতিক করিডোর ও লজিস্টিকস উন্নয়ন: বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এই সেমিনারটি আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সু বাংলাদেশ (আইসিসি-বাংলাদেশ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
প্রধান অতিথি পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক করিডোর শুধু দেশের জন্য নয়, প্রতিবেশী বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্যও উপকার বয়ে আনবে। তবে অন্তবর্তীকালীন সরকার হওয়ায় নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া যাবে না, আগের সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলোতেই বরাদ্দ দেওয়া হবে।
সভাপতির বক্তব্যে আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক করিডোর এখন আর কেবল কল্পনা নয়, বরং বাস্তব, প্রমাণভিত্তিক এবং জরুরি বিষয়। তিনি জানান, এই করিডোর বাস্তবায়ন হলে ২০২০ সালে যেখানে এই অঞ্চলের আউটপুট ছিল ৩২ বিলিয়ন ডলার, তা ২০৫০ সালে গিয়ে দাঁড়াতে পারে ২৮৬ বিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রায় ৭১.৮ মিলিয়ন।
তিনি আরও বলেন, শুল্ক প্রক্রিয়ার ডিজিটাল রূপান্তর, নীতিগত সংস্কার ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের এখনই এক বা দুটি খাতকে (যেমন ওষুধ শিল্প ও ইলেকট্রনিকস) অগ্রাধিকার দিয়ে রপ্তানি বহুমুখীকরণে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশে এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি হো ইউন জিওং বলেন, বাংলাদেশের লজিস্টিক খাতে অবকাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে, যেমন অতিরিক্তভাবে সড়কপথের ওপর নির্ভরতা, যানজট, খরচ বেশি হওয়া এবং মাল্টিমোডাল পরিবহনের ঘাটতি। এগুলো রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য বড় বাধা। তাই করিডোর উন্নয়নের পাশাপাশি লজিস্টিকস খাতের আধুনিকায়নও জরুরি।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডিবির সিনিয়র ইকোনমিকস অফিসার বরুণ কুমার দে, যেখানে তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ও ভবিষ্যৎ কৌশল তুলে ধরেন।
এছাড়াও আলোচনা করেন এডিবির পরিবহন বিশেষজ্ঞ মো. নজরুল ইসলাম এবং সাবেক পরিচালক সাব্যাসাচী মিত্র। তারা অর্থনৈতিক করিডোর, লজিস্টিক হাব এবং বেসরকারি বিনিয়োগের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। পরবর্তীতে একটি প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দেশের বিভিন্ন খাতের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকরা, যেমন: মো. মাহবুব উর রহমান, সিইও, এইচএসবিসি বাংলাদেশ; সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, এমডি ও সিইও, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক; সৈয়দ এরশাদ আহমেদ, সভাপতি, অ্যামচ্যাম বাংলাদেশ ও এমডি, এক্সপেডিটরস বাংলাদেশ; মীর নাসির হোসেন, নির্বাহী বোর্ড সদস্য, আইসিসি বাংলাদেশ ও এমডি, মীর আখতার হোসেন লিমিটেড; গোকর্ণ রাজ আওয়াস্থি ডিজি, FNCCI (নেপাল) ও অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আইসিসি বাংলাদেশের নির্বাহী সদস্য, সাবেক ডিসিসিআই সভাপতি, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, জাইকা, আইডিসিএল, আইডিএলসি, এনার্জিপ্যাক, লঙ্কাবাংলা, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, কোরিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার, জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।