আবারও কড়া বাণিজ্যনীতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এক বিবৃতিতে তিনি জানান, কানাডা থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে তার। একই সঙ্গে অন্যান্য দেশ থেকেও আমদানি করা পণ্যে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প এরইমধ্যে বিভিন্ন দেশের নেতাদের উদ্দেশে একাধিক চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী ১ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে না এলে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ হবে।

ট্রাম্পের ভাষায়, সবাইকে শুল্ক দিতে হবে—হোক তা ১৫% বা ২০%, সময়মতো আমরা ঠিক করে নেব।

বর্তমানে কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৩ সালে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪১৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং আমদানি করেছে ৩৪৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ফলে কানাডার ওপর শুল্ক আরোপ দুই দেশের জন্যই অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তবে পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে আরও বড় পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, কানাডা যদি পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে আমরা আরও বেশি হারে শুল্ক বসাবো।

ট্রাম্পের কানাডা বিরোধিতা নতুন কিছু নয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পরপরই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, কানাডা ও মেক্সিকোর সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে, যতদিন না ফেন্টানিল প্রবাহ এবং অবৈধ অভিবাসী ঢল বন্ধ হয়।

এছাড়া কানাডার দুগ্ধপণ্যের উচ্চ শুল্ক ও কাঠ রপ্তানির বিষয়ে আগেও একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। তার দাবি, কানাডা মার্কিন দুগ্ধপণ্যের ওপর প্রায় ২৫০% শুল্ক বসিয়েছে, যা অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক।

সম্প্রতি কানাডার ডিজিটাল পরিষেবা কর নিয়েও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ট্রাম্প। এই কর মূলত মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর প্রভাব ফেলছিল। ট্রাম্পের চাপে পরে সেই কর সাময়িকভাবে স্থগিত করে কানাডা সরকার।

চিঠিতে ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, “যদি কানাডা ফেন্টানিল প্রবাহ ঠেকাতে আমার সঙ্গে সহযোগিতা করে, তাহলে শুল্ক হার পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। তা বাড়তেও পারে, কমতেও।”

চিঠির শেষ লাইনে তিনি আবারও লেখেন, “আপনি কখনোই আমেরিকার প্রতি হতাশ হবেন না।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এমন আচমকা বাণিজ্যনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যেতে পারে এবং মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে ভুক্তভোগী দেশগুলো।

আগামী নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হলে তার বাণিজ্যনীতি শুধু কানাডা নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতির জন্য একটি নতুন ও অপ্রত্যাশিত বাস্তবতা হয়ে উঠতে পারে।