দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি ব্রাজিলের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক উত্তেজনা আরও গভীর হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, ব্রাজিল সরকারের আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছে। তিনি দাবি করেন, ব্রাজিল বর্তমানে সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর বিচার প্রক্রিয়াকে ‘উইচ হান্ট’ বা রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালনা করছে।
ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা কড়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ব্রাজিল কারো হস্তক্ষেপ সহ্য করবে না। শুল্ক আরোপ করা হলে আমরাও পাল্টা ব্যবস্থা নেব।”
ট্রাম্পের মতে, আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হবে, যা শুধু ব্রাজিল নয়, আরও ২১টি দেশের জন্যও প্রযোজ্য হবে। তবে ব্রাজিলের প্রতি পাঠানো চিঠিটি ছিল সবচেয়ে কঠোর, যেখানে তামার (কপার) মতো পণ্যের আমদানিতেও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, “বর্তমান মার্কিন সরকার শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বাকস্বাধীনতা ও নির্বাচনী স্বচ্ছতার ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। আমরা জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ব্রাজিলের ডিজিটাল নীতির বিরুদ্ধে ‘৩০১ ধারা’ অনুসারে তদন্ত শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। উল্লেখ্য, এই ধারা এর আগে চীনের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেছিলেন ট্রাম্প, যার ভিত্তিতে চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।
এদিকে, ব্রাজিলের আদালতের সাম্প্রতিক এক রায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত কনটেন্টের জন্য দায়ী করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এক্স (পূর্বে টুইটার) সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়, যা নিয়ে ট্রাম্পের সংস্থা ‘ট্রাম্প মিডিয়া’-ও আইনি লড়াইয়ে জড়িয়েছে।
ট্রাম্প চিঠিতে ব্রিকস জোটকেও ‘অ্যান্টি-আমেরিকান’ আখ্যা দিয়ে জোটভুক্ত দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। এর পাল্টা জবাবে প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, “ট্রাম্প এখনো বুঝতে পারছেন না—বিশ্ব বদলে গেছে। আমরা আর কোনো সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেব না।”
এছাড়া ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোকে “অত্যন্ত সম্মানিত নেতা” বলে উল্লেখ করেন এবং তার বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিশোধ বলে অভিহিত করেন। বোলসোনারোও ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আপনার সমর্থন আমার জন্য সম্মানের।”