খুলনার বাজারে ফের চোখ রাঙাচ্ছে দেশী পেঁয়াজ। পেঁয়াজের উত্তাপে পুড়ছে গোটা খুলনাঞ্চলের বাজার। হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম এক লাফে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পেঁয়াজ কিনতে হোঁচট খাচ্ছে সাধারন ক্রেতারা। যার প্রভাব ইতোমধ্যে খুলনার বাজারে পড়তে শুরু করেছে, মাত্র ৩/৪ দিনের ব্যবধানে খুলনার পাইকারি বাজারে ৭০ টাকার পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। বাছাইকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। খুচরা বাজারে দাম আরো বেশি প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০/১২০ টাকা দরে।
হঠাৎ করে পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনের কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কৃষকরা যে পেঁয়াজ মজুত করে রেখে ছিল, তা প্রায় শেষের দিকে। ইতোমধ্যে মজুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ক্রমশই কৃষকদের কাছে মজুত করা পেঁয়াজ কমে আসছে। তাছাড়া কয়েক দিন আগে, সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্নিঝড় ‘মোন্থা’র প্রভাবে লঘুচাপের দরুন অতিবৃষ্টিপাতের কারণে নতুন কালী পেয়াজের আবাদ ব্যাপক আকারে ক্ষতি হয়েছে। এতে পেঁয়াজ চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ফসলের ক্ষেত নষ্ট হওয়ার দরুন পেঁয়াজ চাষের উৎপাদন একমাস পিছিয়ে পড়েছে। তারই প্রভাব পড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। তারা আরো জানিয়েছেন, সামনে বাজারে নতুন কালি পেয়াজ আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও দাম কমে আসবে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা ধারনা করছেন, হঠাৎ বাজারে পেঁয়াজের দামের যে ছন্দপতন ঘটেছে, এমতাবস্থায় যদি সরকার পেয়াজ এল.সি করে তবে সাময়িক পেঁয়াজের বাজারে যে অস্থিরতা বিরাজ করে, তা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
খুলনা বাজারে পেঁয়াজের হঠাৎ উর্ধ্বগতির বিষয়ে সাধারন ভোক্তারা বলছেন, প্রতি বছর পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে থাকেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। গত কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি চলছে। হঠাৎ করে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে রাতারাতি কোনো না কোনো অজুহাতে পেঁয়াজের দাম হুড়হুড় করে বাড়িয়ে দেয়। আর বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের একটা ট্রেডিশন চালু হয়ে গেছে, কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা দিলে, ওই সুযোগে ডাকাতি শুরু করে। বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের সরবরাহ রয়েছে। কালো বাজারিরা মজুতের ঘাটতি, অতিবৃষ্টিতে পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট ইত্যাদি অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করেছে। খুলনার বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা এবং ক্ষোভ ফেটে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা সামনে আরো দাম বৃদ্ধির ব্যাপারেও শঙ্কিত। এমতাবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি হস্তক্ষেপ কামনাসহ নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে ব্যবস্থা গ্রহণের জোরদার দাবি তুলেছেন।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের বিপরীতে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা নগরীর পাইকারি বাজার হতে পেঁয়াজ কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করি। যে সময় যে দামে কিনি, সেই সময় সেই দামে বিক্রি করি, সামান্য লাভে বিক্রি করি।
কেসিসির সোনাডাঙ্গা পাইকারী বাজারে ব্যবসায়ী মো. জলিল জানান, মওসুমের শুরুতে কৃষক ও গৃহস্থরা পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত করেন। ওই সময় পেঁয়াজ কম দামেও বিক্রি করেছেন। ওই সময় আমরাও কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। ওই অল্প দামে পেয়াজ বিক্রি করতে করতে কৃষকের মজুতকৃত পেঁয়াজ প্রায় শেষের দিকে। মজুত সংকটের কারণে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছুদিন হয়তো বেশি দামে পেঁয়াজ খাওয়া লাগবে, সামনে নতুন পেয়াজ ওঠলে দাম কমে যাবে। তাছাড়া, বর্তমানে সার-বীজ প্রভৃতির যে দাম বাড়তি, তাতে যদি কৃষক পেঁয়াজ বিক্রিতে দাম বেশি না পায়, তবে চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
মেসার্স জোনাকী ভান্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী নগরীর ময়লাপোতা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী কাওসার জানান, সোনাডাঙ্গা পাইকারি বাজার হতে বাছাই করা পেঁয়াজ ১০৯ টাকা কেজি দরে কেনা লাগছে। এরপর খরচ আছে, খুচরা ১১৫টাকা দরে বিক্রি করছি। যে সময় যেমন কেনা, সেই সময় সময় তেমন দামে বিক্রি করি। রাখি বা মজুতের কারণে বর্তমানে পেয়াজের দাম বেড়েছে।
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মাদ সেলিম জানান, খুলনার নিত্যপণ্যের বাজারে আমরা নিয়মিত তদারকিসহ অভিযান অব্যহত রেখেছি। ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘিত করলে ওই ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা হিসাবে জরিমানা আরোপসহ আদায় করা হচ্ছে। যেহেতু পেঁয়াজের মজুত সংকটকে কেন্দ্র করে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে অবগত করা হয়েছে, এ ব্যাপারে বাজার মনিটরিং করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সরকার প্রদত্ত নিয়মনীতির বাইরে ব্যবসা পরিচালনা করলে তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তর হতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।