কবির আহমদ, সিলেট ব্যুরো: সিলটের বাজারে কাঁচা মরিচের পাশাপাশি সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। যারা দিনে আনে দিনে খায় এ সমস্ত দিন মজুররা পড়েছেন চরম বিপাকে। সবজি কিনতে বাজারে গিয়ে এ যেন মাথায় হাত পড়ে যায় তাদের। বিশেষ করে বিভাগীয় নগরী সিলেটের প্রতিটি খুচরা ও পাইকারী বাজারে কাঁচামরিচ ৪০০-৪৫০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যেকোন ধরনের সবজি ৭০-১০০ টাকার নিচে কেজি পাওয়া যাচ্ছে না। সবজিতে নেই কোন স্বস্তি। একমাত্র আলু ছাড়া সকল সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিদিন ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি লেগেই আছে।

এসএমপি পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী (পিপিএম) ও সিলেটের জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম ফুটপাতের সবজি ব্যাবসায়ীদের ব্যাপারে হার্ড লাইনে চলে যাওয়ায় সবজির বাজারে আরও প্রভাব পড়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়েছ প্রতি সবজিতে ১০-১৫ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর সোবহানীঘাট একমাত্র পাইকারী সবজি বাজার এবং নগীরর বন্দরবাজার, ব্রহ্ময়ীবাজার, আম্বরখানা, মদিনামার্কেট, রিকাবীবাজার ও দক্ষিণ সুরমার কদমতলী ও ভার্থখলা বাজার ঘুরে দেখা যায় সবজির বাজারে আসা ক্রেতা সাধারণের আর্তনাদ। যেসব শ্রমিক প্রতিদিন ৫০০-৭০০ টাকা রুজি করেন তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। মাছ কিনবেন না সবজি কিনবেন এ যেন মরার উপর খারার ঘা।

গত এক সপ্তাহে সিলেটের বাজারে কাঁচা মরিচসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা স্থানীয় ক্রেতাদের জন্য এক নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে সিলেটের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কিছু উপজেলায় মরিচের দাম ৫০০ টাকা কেজি পর্যন্ত পৌঁছেছে।

বিক্রেতাদের মতে, এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। তাদের মতে, দীর্ঘ বর্ষা ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে মরিচখেতের গাছ পচে গেছে এবং পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে মরিচের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এছাড়া দুর্গাপূজার সময় ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ থাকার কারণে মরিচের আমদানি বন্ধ রয়েছে, যা সরবরাহ সংকটে পরিণত হয়েছে এবং দাম বেড়েছে। এছাড়া, কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি সিলেটের বাজারে সব ধরনের সবজির দামও বাড়তে শুরু করেছে। শসা, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, করলা, পটল, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা এবং কাচকলতি সহ অন্যান্য সবজির দাম কেজি প্রতি ৮০ টাকার উপরে চলে গেছে। বিশেষত বেগুন এবং করলার দাম ১০০ টাকায় পৌঁছেছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য অতিরিক্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। অপরদিকে, হযরত চান্দেঁ আলী শাহ মেমোলিয়ল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তাহমিনা বেগম সুমা দৈনিক সংগ্রামকে জানান, “প্রতিদিনের রান্নাবান্নায় অন্যান্য সবজির সাথে কাঁচামরিচ লাগবেই। সিলেটিদের সকল সবজিতে বিশেষ করে নুডুলস, চানাভুনায় কাঁচামরিচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচামরিচ ছাড়া কোন তরকারিতে স্বাদ হয় না। আমি প্রয়োজনে ১০০ টাকায় মাত্র ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনেছেন। দাম আরও বাড়লেও কাঁচা মরিচ কিনতে হবে।” তবে ঐ শিক্ষিকা সবজি বাজারসহ সকল বাজারে সিলেটের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমাদের নবাগত জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম স্যার সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করি ডিসি স্যার বাজার মনিটরিং করে কাঁচামরিচসহ সকল সবজিতে মানুষের আস্তা ফিরিয়ে আনবেন।” এদিকে সিলেটের বাজারে সবজির দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো মৌসুমের শেষ দিকে সবজি উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়া। বন্দরবাজারের এক সবজি বিক্রেতা জানান, পাইকারি বাজারে সবজি সরবরাহ অর্ধেকে নেমে গেছে এবং ফলনের পরিমাণও কমে গেছে, ফলে দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, "আমরা বেশি দামে কিনে এনে, বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।" দুর্গাপূজার ছুটির কারণে গত ৬ দিন বন্ধ ছিল আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। ছুটি শেষ হওয়ায় শনিবার ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়েছে। আমদানি করা মরিচ আসছে ভারতের মধুপুর, বেল ডাঙ্গা, বিহারসহ বিভিন্ন প্রদেশ থেকে। এসব মরিচ সরবরাহ হচ্ছে ঢাকা, সিলেট ও রংপুরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে।