মো. আল আমিন, মাধবদী (নরসিংদী) : এবার কাঁচা মরিচের দাম ৪০০ টাকা ছাড়ালো নরসিংদীর মাধবদী বাজারে। খুচরা বাজারে এখন এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ৪২০ টাকার আশপাশে। অবশ্য সাধারণ ক্রেতারা একসঙ্গে এক কেজি কাঁচা মরিচ কেনেন না। ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনতে তাঁদের অন্তত ১শ টাকা থেকে ১১০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। পাঁচ দিন আগেও এক কেজি মরিচের দাম ছিল ২২০-২৫০টাকা। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে প্রতি কেজিতে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ১০০-১৩০ টাকা করে। গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে কাঁচা মরিচের দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা ছাড়িয়েছিল।
শুক্রবার মাধবদী বাজার, পাঁচদোনা বাজার, শেখেরচর বাজার, আব্দুল্লাহ বাজার ও আশপাশের ছোট ছোট বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে কাঁচা মরিচের দামের এ তথ্য জানা গেছে। মাধবদী বাজারে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতটির মতো সবজির দোকান রয়েছে। শুক্রবার সকালে এই বাজারে গিয়ে দেখা গেল, কোনো সবজির দোকানেই ৪০০ টাকা কেজির নিচে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে না। আর মান একটু ভালো হলে সেই দাম আরেকটু বেশি রাখা হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত তিন দিনে দেশে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রায় একই সময়ে পূজার ছুটিতে পণ্য আমদানির পরিমাণ কমেছে। এতে সব মিলিয়ে বাজারে কাঁচা মরিচসহ সবজির সরবরাহ কমেছে। এ কারণে দাম বেড়েছে। অন্য সবজির দামও বাড়তি। শুধু কাঁচা মরিচই নয়, বাজারে বেশির ভাগ সবজির দামও বাড়তি। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। শীতের আগাম সবজির দাম তুলনামূলক বেশি বেড়েছে। শিমের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৫০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ৩০-৪০ টাকা করে বেড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের মাছ, মুরগি, ডাল ও চালের দাম উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে।
মাধবদী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন এক কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকায়, যা সপ্তাহখানেক আগে ছিল ১০০ টাকার আশপাশে। আর ছয়-সাত দিন আগে ধরনভেদে এক কেজি বেগুন ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, যা আজ শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ১২০-১৪০ টাকায়। যদিও সবচেয়ে চড়া দাম গোল বেগুনের; কেজি ১৫০/১৬০ টাকার ওপরে। অন্যান্য সবজির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা করে বেড়েছে। দাম বাড়ার পরে পটোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দুল, প্রভৃতি সবজি ৭০-৮০ টাকায় এবং কাঁকরোল, করলা, ঢ্যাড়স, বরবটি ১০০ টাকায়, লাউ প্রতি পিস (ছোট ও বড়) ৮০-১২০ টাকায় এবং জালি প্রতি পিস ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ৭০-৮০ টাকার নিচে তেমন কোনো সবজি কেনা যাচ্ছে না। বাজারে সবজির মধ্যে কেবল কাঁচা পেঁপে কম দামে ২০-২৫ টাকা কেজি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। আর শাপলার আঁটি ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া কচুর মুখি ৬০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া শসা, মিষ্টি কুমড়া ও ধুন্দল ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাকি প্রায় সব সবজির দাম ৮০ টাকার উপরে রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ সবজির দামই কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে সপ্তাহের ব্যবধানে।
পাঁচদোনা বাজার ও আব্দুল্লাহ বাজার ঘুরেও কাছাকাছি দাম দেখা গেছে। মাধবদী বাজারের সবজি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন আনু জানান, ‘বর্তমান বাজারে দেশে উৎপাদিত কাঁচা মরিচ ও টমেটো নেই বললেই চলে। যেসব কাঁচা মরিচ ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে, তার প্রায় পুরোটাই ভারত থেকে আমদানি করা। কিন্তু পূজার ছুটির কারণে এসব পণ্যের আমদানি কমেছে। অন্যদিকে দুই-তিন দিন বৃষ্টির কারণে দেশীয় সবজির সরবরাহও কিছুটা কম। এসব কারণে সবজির দাম এতটা চড়া।’
মাধবদী বাজারের চাউল ব্যবসায়ী ওসমান টেডার্সের মালিক ওসমান গনি বলেন, সবজির দামে কোনো লাগাম নেই। তিন-চার পদের সবজি কিনলেই ৪০০-৫০০ টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা মাছ গোস্তের পাশাপাশি এখন সবজিও কিনে খেতে পারছে না। দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।