বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ায় স্বস্তি আসতে শুরু করেছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও ৬০ টাকা কেজির কমে কোনো সবজি মিলতো না। তবে বাজারে এখন সবজির দামে ততটা অস্বস্তি নেই। শীতের আগাম সবজির সরবরাহ বাড়ায় দামও অনেকটাই কমেছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। অপরদিকে দুই সপ্তাহ আগে দেড়শো টাকায় ওঠা ডিমের ডজন কয়েক দফা কমে ১৩০ টাকায় নেমেছে। দাম কমেছে ব্রয়লার মুরগিরও। আর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে ইলিশ মাছের সরবরাহ শুরু হয়েছে এ সপ্তাহে। তবে ইলিশের দাম এখনো চড়া।
বাজারে বিক্রেতারা বলছেন, শিম, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম কমার কারণে অন্য সবজির দামও কমতির দিকে। এর প্রভাবে ডিম ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তির আভাস মিলছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, বাজারে সবজির দাম কমে আসার পাশাপাশি, প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ হয়েছে বিভিন্ন রকমের সবজির। প্রতিকেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, প্রতি কেজি বরবটি ৬০ টাকায়, প্রতি কেজি করলা ৬০ টাকায়, প্রতি কেজি শসা ৫০ টাকায়, গাজর (দেশি) প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, টমেটো প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৪০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৪০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০ টাকা, কাঁচা কলা (প্রতি হালি) ৪০ টাকা, বেগুন (গোল) প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঝিঙা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ধন্দুল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কঁচুর লতি প্রতি কেজি ৬০ টাকা। কঁচু প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ফুল কপি (ছোট) প্রতি পিস ৫০ টাকা, জালি প্রতি কেজি ৪০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ২৫ টাকা এবং বাঁধা কপি (ছোট) প্রতি পিস ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দামও কমে ১০০ টাকার মধ্যে এসেছে। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে এ দাম কিছুটা বেশি।
এদিকে, ইলিশ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে এ মাছের বিক্রি শুরু হয়েছে গত পাঁচদিন আগে। তবে দাম আগের মতোই চড়া। বাজারে ৩০০-৪০০ গ্রামের ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। আর ৮০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। বাজারে অন্যান্য মাছের দামও আগের কয়েক সপ্তাহের মতোই চড়া।
সবজির দাম কমার ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে ডিম ও মুরগির বাজারে। গত সপ্তাহে ফার্মের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে কমবেশি ১৪০ টাকা দরে। ডজনে ১০ টাকা কমে এখন বড় বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। যদিও পাড়া-মহল্লার দোকানে এখনো ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কেজিতে ১০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি এখন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের দামেই সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া আগের দরেই বেচাকেনা হচ্ছে গরুর গোশত, প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা।
পেঁয়াজের বাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দেশি পেঁয়াজেই চলছে বাজার। ভালো মানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে।
দেশি মসুর ডালের দাম আগের মতো ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও আমদানি করা মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০৫ টাকায়। চিনির বাজারেও কিছুটা ভালো খবর রয়েছে। প্রতি কেজি চিনি কেনা যাচ্ছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা দরে। তবে ভোজ্যতেলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মাছের বাজারে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের মাছের দাম চড়া। শীতের মৌসুম এলেও বাজারে ঢুকছে না দেশি মাছ। চাষের মাছ রুই, কাতল, পাবদা, পাঙ্গাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব মাছের দাম এখন চড়া। গত দুই সপ্তাহ ব্যবধানে প্রজাতিভেদে প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। মাছের সরবরাহ মোটামুটি কম দেখা গেছে। এদিকে, ফের বাজারে আসতে শুরু করেছে ছোট ইলিশ মাছ।
বাজারে দেখা গেছে, বর্তমানে কাতল মাছ কেজিপ্রতি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। ছোট ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০টাকা, রুই কেজিপ্রতি ৩৫০ টাকা, বড় ট্যাংরা ৯০০ টাকা, পাবদা ৩৫০ টাকা, শিং মাছ ৩৫০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, কই মাছ ২০০ টাকা, ছোট সরপুঁটি ২০০ টাকা এবং বড় সরপুঁটি ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতাদের দাবি, বাজারে রুই, কাতল, পাবদা ও ইলিশের দাম ক্রমশ বাড়ছেই। দেশি মাছেও হাত দেয়া যায় না। চাষের মাছের দাম কমাতে হবে।