রাজশাহী মহানগরীতে পদ্মা নদীর ‘টাটকা’ মাছ কিনতে ক্রেতার ভিড় করেন নিয়মিত। খুব সকাল সকাল টাটকা মাছের এই ছোট্ট বাজারটি ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

রাজশাহী মহানগরীর রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুলের সামনে শ্রীরামপুর বাঁধে পদ্মা নদীর টাটকা মাছ পাওয়া যায় বলে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৎস্যপ্রেমিরা এখানে ছুটে আসেন। প্রতিদিন ভোর থেকে নদীপাড়ে বসে মিনি তাজা মাছের এই বাজার। ক্রেতাদের কাছে এটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাজারটি। প্রতি বছরই পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করলে হরেক রকমের মাছ ধরা পড়ে জেলেদের জালে। এবছর পদ্মা নদীতে পানি বেড়েছিল। বর্তমানে পানি কমতে থাকায় এবারও ধরা পড়ছে হরেক রকমের মাছ। সারারাত নৌকা আর জাল দিয়ে পদ্মার বুক চিরে চষে বেড়িয়ে মাছ ধরে খুব ভোরবেলা পদ্মা নদীর পাড়েই জমজমাট হাট বসিয়ে মাছ কেনাবেচা হচ্ছে। ক্রেতারাও খুবই আগ্রহ ভরে এই মাছগুলো ক্রয় করছেন। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এসব মাছ।

নদীর বিভিন্ন ধরনের তাজা মাছ বিক্রি হচ্ছে বাজারমূল্যের চেয়ে কমবেশি দামে। জেলেরা জানান, নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে নদীতে মাছ কম ধরা পড়ে, আর পানি কমতে থাকলে নদীতে বেশি মাছ ধরা পড়ে। এখন পদ্মা নদীর পানি কমার সাথে সাথে নদীতে বেশি মাছ ধরা পড়তে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগেও হু হু করে উত্তাল পদ্মার পানি বাড়ছিল। সে সময় নদীতে মাছের দেখা পাওয়া ছিল কষ্টকর। জেলে পরিবারগুলোতেও হতাশা নেমে এসেছিল। পদ্মার পানি কমার সাথে সাথে মাছ ধরা বেশি পড়ছে। তবে এখনও নদীতে পানি স্থিতিশীল অবস্থায় আসেনি তাই কম ধরা পড়ছে। একারণে মাছের দাম বেশি বলে জানান তারা। শ্রীরামপুর বাঁধে শনিবার সকালে দেখা যায়, পদ্মা নদী থেকে মাছ ধরে সরাসরি এই বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। সাথে সাথে ক্রেতারা মাছ ক্রয়ের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। ফলে একটু বেশি দাম হলেও টাটকা মাছ নিতে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ক্রেতারা। জেলেরা বিভিন্ন রকমের মাছ বিক্রি করতে পেরে খুবই আনন্দে মেতে উঠছেন। সারারাত নৌকা নিয়ে পদ্মায় জাল ফেলে তারা মাছ ধরছেন। এই মাছ ভোরবেলায় নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। জেলের জালে উঠছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এর মধ্যে ছোট বাঘাইড়, পাবদা, ছোট চিংড়ি, চিতল, রিঠা, মলা, ট্যাংরা, পিয়ালি, বাচা, পাতাশি, বেলে, পুটিসহ বিভিন্ন জাতের মিশালি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। মান ভেদে এসব মাছের দাম ১ হাজার টাকা, আটশত ও ছয়শত টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। জেলে রুবেল ইসলাম জানান, “পদ্মা নদীতে মাছ ধরা শুরু হয় রাত থেকেই।

সন্ধ্যার পর জাল ও নৌকা প্রস্তুত করে আবহাওয়া দেখে রাত ১০টার দিকে চলে যায়। সারারাতই মাছ ধরি। ভোরবেলায় মাছ নিয়ে এসে এখানেই বিক্রি করি। এতে আমাদের লাভও বেশি হয়।” কারণ আড়ৎ বা বাজার থেকে এখানে মাছ বিক্রি করে লাভ বেশি হয়। আবার পরিশ্রমও সার্থক মনে হয়। আড়তে মাছ বিক্রি করতে গেলে খাজনা দিতে হয়, তখন দাম বেড়ে যায়।

বাজারেও তাই। তাই এখানে বাঁধে উপর বসে মাছ বিক্রি করে দিই কোনো খাজনা লাগে না। মাছ কিনতে আসা ক্রেতা ইমরান আলী জানান, সকালে নদীপাড়ে পদ্মা নদীর টাটকা মাছ কিনতে খুবই ভালো লাগছে। কারণ অল্প সময়ে এখানে অনেকে মিলে মজা করে মাছ কেনা যায়। সরাসরি নদী থেকে ধরে এনে জেলেরা এখানে মাছ বিক্রি করেন। টাটকা মাছ খেতেও অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।