রাজধানীর বাজারে চার মাস ধরে সবজির দাম উচ্চ পর্যায়ে স্থির রয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, সবজির মৌসুম নয় বা বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট -এমন কারণ দেখিয়ে বিক্রেতারা লাগামহীন দাম ধরে রেখেছেন। বাজারে শুধু মাত্র পেঁপে ছাড়া সব সবজির দাম ৮০ থেকে ১০০ এর ঘরে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সবজির বাড়তি দাম দেখা গেছে।
এদিন বাজারে প্রতিকেজি পটল বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়, বেগুন (গোল) প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, বেগুন (লম্বা) প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ধন্দুল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঝিঙা প্রতি কেজি ৭০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১৩০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, বাঁধাকপি (ছোট) প্রতি পিস ৬০ টাকা, গাজর প্রতি পিস ১৩০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, লেবু প্রতি হালি ৪০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিটি সবজির দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকার ঘরে, আবার কিছু কিছু সবজি তার চেয়েও বেশি দাম। বিগত চার মাস ধরে অতিরিক্ত বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। এত বেশি দামে সবজি কিনতে পারছে না সাধারণ ক্রেতারা। আগে যেখানে এক কেজি সবজি কিনতাম এখন অতিরিক্ত বেশি দাম হওয়ার কারণে আধা কেজি সবজি কিনছি। সাধারণ ক্রেতাদের আমার মত একই অবস্থা। মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা বলেন, বিগত চার মাস ধরে সবজি বিক্রেতারা বলে আসছে, এখন বেশিরভাগ সবজির মৌসুম নয় তাই দাম বেশি। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও সবজির দাম বাড়তি। তাহলে মৌসুমটা শুরু হচ্ছে কখন আর শেষ হচ্ছে বা কখন? এত বেশি সবজির দাম, তবুও বাজার মনিটরিংয়ের কোন উদ্যোগ কখনো দেখলাম না।
সবজির দাম বৃদ্ধি বিষয়ে মগবাজারের সবজি বিক্রেতা এরশাদ আলী বলেন, টানা কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির কারণে খেত ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাবে আরো কিছুটা দাম বেড়েছে সবজির। এছাড়া বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ হওয়ায় সেই সবজিগুলোর দাম বাড়তে যাচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই নতুন সবজি উঠতে শুরু করবে, তখন থেকে সবজির দাম কমে যাবে। বর্তমানে বাজারে চাহিদার তুলনায় সবজি সরবরাহ কম, যে কারণে সব ধরনের সবজির দামই বাড়তি যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের বাজারে নিত্যপণ্যের দামে ওঠানামা অব্যাহত রয়েছে। চাল-ডালসহ বেশিরভাগ মুদিপণ্যের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও সবজি, মুরগি, ডিম ও মাছের দামে বেড়েছে চাপ। বিশেষ করে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার কারণে সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে দামে বেড়েছে অস্থিরতা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার ও আগ্রাবাদ চৌমুহনী কর্ণফুলী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে—বেশিরভাগ সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে নতুন মৌসুমি শীতকালীন সবজির দাম তুলনামূলক বেশি।
টমেটো মানভেদে কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ২০০ টাকা, দেশি গাজর ৭০ টাকা, চায়না গাজর ১২০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, পটল ৮০ থেকে ১২০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের দাম এক সপ্তাহে কমে ১৬০ টাকায় এসেছে। ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩০০ টাকায়।
শীতকালীন সবজির মধ্যে ফুলকপি ২০০ টাকা, শিম ২২০ টাকা, মূলা ১০০ টাকা, বাঁধাকপি ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শাকের মধ্যে কচুশাক ৪০ টাকা, লালশাক ও পুঁইশাক ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রেতাদের দাবি, শীতকালীন সবজির দাম শুরুতে বেশি থাকলেও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে।
অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগির দাম এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৮০ টাকা। সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা, লেয়ার ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৩০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের ডিম ডজনপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, কোথাও কোথাও দাম ১৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। মাংসের বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল। গরু ও মহিষের মাংস ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১২০০ টাকায়।
মাছের বাজারে প্রভাব পড়েছে সাগরে মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে। সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামে বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। বড় বাগদা চিংড়ি এক সপ্তাহে ৮৩০ থেকে বেড়ে ৯০০ টাকায় উঠেছে। গলদা চিংড়ি ৮৫০, ছোট চিংড়ি ৭০০, বড় রুই ৫০০, মাঝারি ৪৬০, ছোট রুই ৩৬০, কাতলা ৩৬০ থেকে ৪০০, কোরাল ৭০০ থেকে ৮০০, পাবদা ৪০০, রূপচাঁদা ৮৫০ ও টেংরা ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের দামও চড়া—এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ২৬০০ টাকা, আর এক কেজির কম ইলিশ ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ছোট রসুন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, বড় রসুন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, কেরালার আদা ১২০ টাকা ও চীনের আদা ১৬০ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে। চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মিনিকেট ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, আটাশ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, বাসমতী ৯৫ থেকে ১২০ টাকা, চিনিগুঁড়া ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদিপণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, প্যাকেটজাত আটা ১০০ থেকে ১১০ টাকা, খোলা ময়দা ৫৫ টাকা, প্যাকেটজাত ময়দা ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডালের মধ্যে নেপালি মসুর ১৬০, মোটা মসুর ১০০ থেকে ১১০, মুগ ১৩০ থেকে ১৪০, খেসারি ১০০, বুট ১১০, মাষকলাই ১৮০, ছোলা ১০০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে।
তেলের বাজারে বোতলজাত সয়াবিন লিটারপ্রতি ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৭২ টাকা, আর সরিষার তেল ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা চিনি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, প্যাকেটজাত ১২০ টাকা, বাদাম ও মশলার বাজারও চড়া দামে চলছে।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, চাল-ডালের দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও সবজি, ডিম, মুরগি ও মাছের বাজারে দামের তারতম্যে ভোক্তারা ভোগান্তিতে পড়েছেন।