কুরবানি ঈদের পর থেকে বেশ কিছুদিন সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম স্থিতিশীল ছিল। এখন বাড়তে শুরু করেছে। প্রায় সবধরনের সবজির দাম বেড়েছে। এদিকে চালের বাজার চড়া। গত দুই সপ্তাহে কেজিপ্রতি প্রায় ৮ টাকা বেড়েছে চালের দাম। মাছের বাজারও চড়া। তবে মুরগির দাম কিছুটা কমেছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, ঈদের পর এখন খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মোকামগুলোতেই চালের দাম বেড়েছে। ঢাকার ব্যবসায়ীদের দাবি, চালকল মালিকরা ঈদের পর কারবার চাঙা হওয়ায় এই দাম বাড়িয়েছেন।
গত সপ্তাহ পর্যন্ত বিভিন্ন মিলগেটে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি চালের দাম ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এ সপ্তাহে আরও প্রায় দেড়শ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ার তথ্য জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। সব মিলে ঈদের পর প্রতি বস্তা চালের দাম সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যার ফলে এখন প্রতিকেজি চাল মানভেদে ২ থেকে ৮ টাকা টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৮০ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৬ টাকা কেজি।
কাঁচা বাজারে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের সবজির দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা কেজিপ্রতি বেড়েছে। বরবটি, কাকরোল, উস্তা কেজিপ্রতি ৮০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পেঁপে, পটল, ঢ্যাঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আর ঝিঙা, চিচিঙা কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে চাইছেন বিক্রেতারা। তবে ভ্রাম্যমাণ দোকানে দাম কিছুটা কম।
বাজারে বেগুনের কেজি প্রকারভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, দেশি পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সজনে ডাটার কেজি ১২০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, কাঁচা আম ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা ও কাঁচামরিচ ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি টমেটো ৮০ টাকা, ভারতীয় গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, দেশি শসা ৫০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনে পাতা ৩০০ টাকা কেজি, কাঁচা কলার হালি ২০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা পিস, ক্যাপসিকাম ৩৫০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কলমি শাক দুই আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাটা শাক দুই আঁটি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে আলু ২৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মাছের বাজার গত সপ্তাহের মতোই চড়া দেখা গেছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ ২৭০০ টাকা এবং ৭০০ গ্রামের ইলিশ ২৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। চাষের এক কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, দেশি শিং ১০০০ টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা , মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, বোয়ালমাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকা এবং পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির বাজারে দেখা যায়, সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৩০ টাকা কমে ৩০০ টাকা এবং সোনালি হাইব্রিড মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৯০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গরুর গোশত কেজিপ্রতি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার গোশত ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির গোশত ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে আদার কেজি ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, দেশি রসুন ১৩০ টাকা এবং ভারতীয় রসুন ১৮০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।