শফিকুল ইসলাম, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মাটিতে কচু চাষের সম্ভাবনা অনেক, তবে পরিকল্পিত উপায়ে এ ফসলের চাষ এখনো তেমনভাবে বিস্তৃত হয়নি। জেলার বিভিন্ন স্থানে অল্প পরিসরে কচু চাষ হলেও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, বাজার ব্যবস্থাপনা ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো গেলে এটি কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর, ভোলাহাট, নাচোল ও শিবগঞ্জ উপজেলার মাটি উর্বর এবং পানি ধারণক্ষম। এসব এলাকায় বছরের প্রায় আট মাস কচু চাষ উপযোগী থাকে। জলাশয়, নিম্নাঞ্চল বা হালকা উঁচু জমিতেও কচু ভালো জন্মে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী এলাকায় কচুর ফলন তুলনামূলক বেশি হয়। কচু শুধু একটি সবজি নয়, এটি অর্থকরী ফসলও বটে। লতি কচু, মুখী কচু, পেঁচা কচু, মানকচুÍপ্রতিটি প্রজাতির বাজারমূল্য ভালো। গোমস্তাপুরে বর্তমানে কিছু কৃষক মুখী ও লতি কচু চাষ করছেন। বাজারে প্রতি কেজি কচু ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৈজ্ঞানিকভাবে জমি তৈরি, বীজ নির্বাচন ও পরিচর্যা করলে প্রতি বিঘায় ৭০ থেকে ৮০ মণ পর্যন্ত কচু উৎপাদন সম্ভব। অথচ বর্তমানে অনেকে পুরোনো বীজ, অপর্যাপ্ত সার ও সেচ ব্যবস্থার অভাবে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছেন না।

গোমস্তাপুরের এলাকার কৃষক আব্দূল্লাহ বলেন,“আগে এলোমেলোভাবে কচু লাগাতাম, ফলনও তেমন হতো না। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে সার-বালাইনাশক ও সেচের নিয়ম মেনে চাষাবাদ করে ফলন দ্বিগুণ পেয়েছি।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কচুর চাষের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো বাজারজাতকরণ। কৃষকরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেকে নিরুৎসাহিত হন। জেলা শহর ও রাজধানীমুখী পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে কচু রপ্তানিও সম্ভব। বিশেষ করে শুকনো কচুর ডাঁটা ও মানকচুর রপ্তানি করে বিদেশি মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা (ডিএও) বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে কচু চাষ শুরু হলে এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষিতে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উন্নত বীজ সরবরাহের উদ্যোগ নিচ্ছি।’

পানির নিচে চাষযোগ্য ও রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে কচু চাষ আরও লাভজনক হতে পারে। পাশাপাশি কৃষক সমবায় গঠন, সংরক্ষণাগার স্থাপন ও সরকারি প্রণোদনা বাড়ালে কচু হতে পারে জেলার অন্যতম রপ্তানিযোগ্য ফসল।

পরিকল্পিত উপায়ে কচু চাষ সম্প্রসারিত হলে গোমস্তাপুরসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় কর্মসংস্থান বাড়বে, কৃষকরা লাভবান হবেন এবং কৃষি নির্ভর অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।