মুহাম্মদ আবু সুফিয়ান, বাউফল (পটুয়াখালী) : বাউফল উপজেলার ৫২ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বর্তমানে চরম জনবল সংকটে ভুগছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সহায়ক কর্মচারীর অভাবে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। বাউফল উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের একমাত্র ভরসা এই হাসপাতাল, অথচ স্বাস্থ্য কমল্পেক্সের আওয়তাধীন ২৮জন মেডিকেল অফিসারসহ বিভিন্ন বিভাগে ১০০টি পদ শুন্য রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনবহুল এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার পদে ১৭জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১০জন ও সহকারী সার্জেন্ট ৫জন, ১জন করে আরএমও (আবাসিক মেডিকেল অফিসার), ডেন্টাল সার্জেন, ইউনানী মেডিকেল অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতাসহ ৩৬টি অনুমোদিত পদ থাকলেও এর মধ্যে বেশিরভাগই শূন্য। বর্তমানে মাত্র ৭ জন চিকিৎসকের কাঁধে গোটা বাউফলের চিকিৎসাসেবা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৪জনকে। রোগীর চাপ প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ জন হলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসকের অভাবে রোগীরা দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
বিশেষ করে সার্জারি, শিশু, মেডিসিন, গাইনী এবং ইএনটি (কান, নাক, গলা) বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকায় জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের পটুয়াখালী সদর হাসপাতাল কিংবা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে। এতে রোগীরা যেমন দুর্ভোগে পড়ছেন, তেমনি বাড়তি খরচ ও ঝুঁকিতে পড়ছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ২১জুন শনিবার সকাল ১০টায় হাসপাতরে গিয়ে ১জন ডাক্তারও পাওয়া যায়নি, ১১২ নং রুমে রোগী দেখছেন (স্যাকমো) মোস্তাফিজুর রহমান। সকাল ১০:৪৫মি: ১জন ডাক্তার প্রবেশ করতে দেখা যায়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫জন মেডিকেল অফিসার কাগজে কলমে থাকলেও বর্তমানে ্এদের ৩ জনই অনুপস্থিত। ডা. ফাতেমা আক্তার বর্তমানে ২মাসের ট্রেনিংয়ে রয়েছেন। এছাড়াও ডা. তাহমিদ, ডা. ইউসুফ অন্যত্র প্রেষনে কাজ করছেন। মেডিকেল অফিসার হিসেবে ১জন মাত্র ডা. মো: শাহরুখ তাকে আবার জরুরী বিভাগেও কাজ করতে হয়। জুনিয়র কনসালটেন্ট মাত্র ২ জন ডা. মাশরেফুল ইসলাম ও ডা. মো: শহিদুল ইসলাম এ বিভাগে ৮টি পদই শুন্য। চিকিৎসক সংকটের কারণে ইউনিয়ন কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বে থাকা ডা: শম্মি আক্তার তরণ, ডা. নুর জাহান, ডা. গোলাম মোস্তাহিদ তাসরীফকে দিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা কোনক্রমে চালু রাখা হয়েছে। আরএমও, ডেন্টাল বিভাগে কোন ডাক্তার নেই। ইউনানী মেডিকেল অফিসার ১জন তিনি অন্যত্র প্রেষনে কাজ করছেন। জরুরী বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় গুরুতর আহত, গর্ভবতী নারী ও শিশু রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
হাসপাতাল কর্তৃৃপক্ষ অভিযোগ করে বলেন-৫২ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও এখানে প্রতিনিয়ত শতাধিক রোগী ভর্তি করতে হয়। জনবল ও সারঞ্জামাদির অপ্রতুলতার কারনে রোগীদে দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে। অপারেশন থিয়েটার ঠিক নেই, আলট্রন্সোগ্রাম মেশিন নষ্ট হয়ে আছে, ইসিজি নেই, কুকুরে কাঁমড়ানো ও সাপে কাঁমড়ানো রোগীদের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহও বন্ধ।
এ স্বাস্থ্য কমপেক্সে ২টি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক ১জন। পরিচ্ছন্নতা কর্মীর ৫টি পদের মধ্যে ৪টি শূন্য। বর্তমানে মাত্র একজন কর্মী কর্মরত থাকলেও তিনি শারীরিকপ্রতিবন্ধী। ফলে হাসপাতালের স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. আ: রউফ উপরোক্ত অভিযোগ স্বীকার করে বলেন চিকিৎসক সংকট আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। পরিচ্ছন্নতা কর্মী না থাকায় বাইরের তিনজনকে অস্থায়ীভাবে এনে কাজ করানো হচ্ছে। ২টি অ্যাম্বুলেন্স কিন্তু ১জন চালক দিয়ে পর্যায়েক্রমে ২টি অ্যাম্বুলেন্স সচল রাখা হয়েছে। বারবার উর্ধ্বতন দপ্তরে জানানো হলেও এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।