মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী

চট্টগ্রাম কোর্টে ১০ জুলাই ২০১২ তারিখে হাজিরা দিতে যাই। সাক্ষী পুলিশের একজন সাবেক ডিআইজি। তিনি কোর্টে হাজির হননি। অপর একজনের সাক্ষী নিতে চাইলে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা আপত্তি করায় কোর্ট মুলতবি করা হয় এবং পরবর্তী তারিখ দেয়া হয় ২৯, ৩০ ও ৩১ জুলাই। আমাকে ১১ জুলাই সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাশিমপুর-২ এর উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সকাল ১০টায় রওয়ানা করে ৫-৩০ থেকে ৫-৪৫ মিঃ এর মধ্যে (বিকেল) গন্তব্যে পৌঁছি। কিন্তু বিনা কারণে জেল গেটে প্রায় ৪৫ মিঃ অপেক্ষা করে তারপর রুমে যাবার সুযোগ পাই। এখানে আমাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের দারুণ অভাব। তাই ব্যাগ ব্যাগেজের প্রতিটি আইটেম তন্ন তন্ন করে গেট খুলে দিলে রুমের দিকে রওয়ানা করার সুযোগ পাওয়া যায়। ব্যাগ ব্যাগেজগুলো বহন করার মত প্রয়োজনীয় লোক খুঁজে পেতেও যথেষ্ট সময় লাগে। কারারক্ষীরাও কোন কোন সময় ব্যাগ ব্যাগেজ বহন করে থাকে। তবে তাদের ভীষণ আফসোস তারা নাকি এর বিনিময়ে কিছুই পায় না। একজন কারারক্ষী একদিন ক্ষোভের সাথে বলল, ‘এ পর্যন্ত যত ভিআইপির মালামাল টানলাম, বাইরে থেকে মুটেগিরি করলে দিনে অন্তত ৫০০ টাকা কামাই করতে পারতাম’। তার কথাটা বেশ ইঙ্গিত বহ। তারা এর বিনিময়ে কিছু পেতে চায়। আমরা বন্দীরা তো নিজের কাছে নগদ রাখতে পারি না। অতএব তাদের মনের এই চাহিদা পূরণ করার তো কোন উপায় নেই। আমার সাথে অনেক কারারক্ষী বেশ ভাল ব্যবহার করে, তাদেরকে খাবার জন্যে কমলা বা বিস্কুট দিলে অনেকেই কিছু নিতে চায় না। এভাবে ভালমন্দ মানুষ প্রায় সব ক্ষেত্রেই আছে। যাক অবশেষে ১১ জুলাই মাগরিবের সময় আমি রুমে পৌঁছে ইস্তিঞ্জা ও অজু সেরে মাগরিবের নামাজ আদায় করে একটু হালকা নাশতা ও চায়ে শরীক হলাম কারাগারের অপর তিন জন রক্ষীর সাথে।

১২ ও ১৩ জুলাই দুই দিন গেল পারিবারিক সাক্ষাতের প্রতীক্ষায়। এবার মোমেন ১০ জুলাই চট্টগ্রাম না গিয়ে ১১ জুলাই যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ১০ জুলাইয়েই কোর্টের পরবর্তী তারিখ ২৯ জুলাই ঘোষণা করায় তাকে আর চট্টগ্রাম যেতে হয়নি। ১৪ জুলাই শনিবারে পরিবারের সদস্য আমার স্ত্রী এবং ছেলে মোমেনের সাথে শুধু মফিজ এসেছিল। মহসীনা তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস থাকার কারণে আসতে পারেনি। সাক্ষাতের সময় জানলাম ১৫ জুলাই আমাকে কোর্টে পাঠাবে। জেল কর্তৃপক্ষকে কিছু জানানো হয়নি। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে জানা গেল কোর্ট হবে ১৬ জুলাই সোমবারে। ঐ দিন আবার মোমেনের পাবনায় যাবার কথা। আমার মনে হচ্ছিল ঐ দিন কোর্টে তার সাথে দেখা নাও হতে পারে। কিন্তু সে পাবনা যাওয়ার পথেই কোর্টে আমার সাথে দেখা করে যায়। ঐ দিনই রাতে পাবনা থেকে ফিরে আসার কথা। আমার বেগম সাহেবাও জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপারে ঝিনেদা যাওয়ার কথা বলেছিল। গিয়েছিল কিনা এখনও এ সম্পর্কে কিছু জানার সুযোগ হয়নি। আগামীকাল ১৯ জুলাই বারডেমে আমার দাঁতের চিকিৎসার জন্যে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আজ বিকেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ওখানে চিকিৎসা যেহেতু নিজ খরচে, তাই পরিবারের সদস্যদের কারো না কারো উপস্থিতি জরুরি। তাই বারডেমে যেতে হলে সে খবরটাও পরিবারের সদস্যদেরকে জানাতে হবে। আজ বিকেলে নিশ্চিত হয়ে তাদেরকে কিভাবে জানানো যাবে তাই ভাবছি। জেল কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করলে এটা কোন সমস্যাই নয়। কিন্তু সব সময় তাদের মনোভাব এক রকম থাকে না বিধায় কখনও সহযোগিতা পাওয়া যায় আবার কখনও পাওয়া যায় না। অবশ্য আমি ইতিবাচক ভূমিকাই আশা করছি। গতকাল ১০ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে আসরের নামাজের আগে একটু কোরআন তেলাওয়াত করছিলাম। এমন সময় আমাদের এখনকার দুজন সেবক যুবরাজ ও দুলাল এসে রুমে ঢুকেই বললেন আপনার একটা সুসংবাদ আছে। আমি প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি ওরা কি বলছে। এরপর একজন বলল নাতনী হয়েছে, ওরা বলল আমার ছেলে নাকি ডেপুটি জেলার মোসাদ্দেককে জানিয়েছে। সুবেদার আসার আগেই আমরা শোনার সাথে সাথে আপনাকে খবরটা জানাতে এসেছি। সুবেদারও একটু পরেই হয়ত এসে যাবে। ওরা আমার রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই সুবেদার মামুন সাহেব এসে বললেন একটা সুসংবাদ আছে, আর তা হলো আপনার নাতি হয়েছে। আরো একটা দুঃসংবাদ আছে, আর তা হলো আপনার কালকে বারডেমে যাওয়া হচ্ছে না, পুলিশের স্কোয়াড পাওয়া যাচ্ছে না। আমি সাথে সাথে বলেছিলাম এটা কোন দুঃসংবাদ নয়, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যেই করেন। আমি আর রমজানের আগে বা রমজানের মধ্যে কোন চিকিৎসা নিতে চাই না। আল্লাহর কাছে নিজেকে সোপর্দ করেছি, তিনি আমার জন্যে যা পছন্দ করেন, তাই আমার জন্যে কল্যাণকর হবে।

মোমেনের স্ত্রীর প্রথমবার সন্তান হওয়ার সময়ের আগে সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। মাঝখানে অনেক সময়ের ব্যবধানে এই তাদের প্রথম সন্তান হল। মোমেন বৌমার কাছে তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের আগেই যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমার স্ত্রীও যেতে বলেছিল। কিন্তু মাঝখানে ছোট ছেলেকে দেখার জন্যে মহসীনাদের সাথে মালয়েশিয়া যাওয়ার কারণে লন্ডনে যাওয়ার প্রোগ্রাম পরিবর্তন করেছে। মোমেনের ২/৩ দিনের মধ্যেই যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী চলাকালে সে বাইরে থাকবে এটাও যেমন তার জন্যে কষ্টের, তেমনি সন্তান ভূমিষ্ট হবার মুহূর্তে স্ত্রীর সাহচর্যে থাকাটাও তার জন্যে জরুরি। তাছাড়া মোমেনের সুপ্রিম কোর্টে প্রাকটিসের জন্যে পরীক্ষাও দিতে হবে এই মাসেই। তাই জুলাই মাসটা তার জন্যে বেশ একটা ঝামেলাপূর্ণ। আল্লাহ হয়ত তার জন্যে একটা সুরাহা করে দেবেন।

বৌমার প্রথম বারে সমস্যা হওয়ায় আমরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কোন সমস্যা ছাড়া সন্তান ভূমিষ্ট হবার কথা শুনে আল্লাহর দরবারে লাখো শুকরিয়া জানালাম। যারা খবর নিয়ে এল তাদেরকে আমার কাছে থাকা আম্বর আতর লাগিয়ে দিয়ে আমার নাতির জন্যে দোয়া চাইলাম।

এই দিনে সবাই বাইরে থাকায় জোহর আদায় করেছি যুবরাজকে সাথে করে আমার রুমেই। আসরের সময় সাথে ছিল দুলাল, হাতেম ও যুবরাজ। মাগরিবের সময় কামারুজ্জামান, আঃ কাদের মোল্লা ও মামুনকে পেয়ে তাদের হাতে আতর লাগিয়ে দিয়ে আমার নাতি হবার শুভ সংবাদটি জানালাম। এই শুভসংবাদের খুশির বিনিময় পরিবারের সদস্যদের সাথে হবে পহেলা রমজান শনিবারে সাপ্তাহিক সাক্ষাতের মুহূর্তে।

আমাদের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা ছিল মোমেন আগেই ওখানে গিয়ে তার স্ত্রীর পাশে থাকবে। তাতো হয়ে উঠল না। বাচ্চা প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ যেটা ডাক্তার জানিয়েছিল তার আগেই আল্লাহর সিদ্ধান্তে আল্লাহর বান্দা দুনিয়ায় এসে গেছে। এটা মোমেনের প্রথম সন্তান, সন্তানকে দেখার জন্যে মনে একটা পিতৃসুলভ আবেগ থাকাটাই স্বাভাবিক। তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লন্ডনে যেতে হবে। মামলা দেখার জন্যে সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ভাইয়েরা আছেন। তাছাড়া এ ব্যাপারে একমাত্র ভরসা তো করছি আল্লাহর উপরই। ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করা আসলেই সম্ভব নয়। তবে আল্লাহ এত মিথ্যাকে বরদাশত করবেন, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, আসলে আদৌ বিশ্বাস করি না। আল্লাহ তার কুদরতি ব্যবস্থায় একটা পথ অবশ্যই বের করবেন। আল্লাহর উপর এভাবে তাওয়াক্কুল করেই চরম দুঃসময়েও হৃদয়ে প্রশান্তি লাভ করি। দুশ্চিন্তা মুক্ত মনে, প্রশান্ত চিত্তে যেন আল্লাহ আমাদের জেল জীবনের সমাপ্তি ঘটানোর ব্যবস্থা করেন সম্মানজনকভাবে। নিজেও আল্লাহর কাছে এজন্যে দোয়া করি। যাদের সাথে দেখা হয়, তাদের কাছেও এ জন্যে দোয়া কামনা করি। কোরআন তেলাওয়াতের সময় বর্তমান অবস্থার সাথে সংগতিপূর্ণ বার্তাগুলোর মর্ম হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সংগতিপূর্ণ বার্তাগুলো বুকে ধারণ করে যথেষ্ট শান্তি ও স্বস্তি ফিরে পাই। গতকাল ছিল আমার পরিবারের সাথে সাক্ষাতের নির্দিষ্ট তারিখ। প্রতিবারের মত এবারেও এজন্যে প্রতীক্ষা করতে হয় অনেকক্ষণ। এরপর দেখার স্লিপ আসার সাথে সাথেই রওয়ানা দেই। জেল গেটের নির্দিষ্ট স্থানে সাক্ষাৎ প্রার্থীদের সাথে আধ ঘন্টার সংক্ষিপ্ত আলাপ হয়। ঘটনাক্রমে কাল ছিল ১ রমজান। বাসা থেকে নিয়ে আসে আমার জন্যে প্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যসামগ্রী যার অধিকাংশই ফল ফলাদি। এর মধ্যে আমার পেটের সমস্যা ও ডায়বেটিসের দিকে খেয়াল রেখে কিছু খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়। এরমধ্যে এক প্যাকেট কোয়েকার ছিল। প্যাকেটটা গেট সার্জেন্ট খুলে ফেলে, এর পর এটা জেলারের অনুমতির জন্যে পাঠানো হয়। আমার ছেলে মোমেন নিজে জেলারের সাথে কথাও বলে। জেলার সুপারের অনুমতি নিয়ে দিয়ে দেবেন বলে কথা দেন। কিন্তু কাল সারা দিন কোন খবর পাওয়া যায়নি। আজ ২২/৭/১২ তে ট্রাইব্যুনালে হাজিরা ছিল। সরকার পক্ষ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীর নাম তালিকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিতে ব্যর্থ হয়। তারা কোন সাক্ষীও হাজির করতে পারেনি। তাই আগামী ৫ আগস্ট তারিখ ধার্য করে আমাকে কাশিমপুর- ২ এ পাঠিয়ে দেয়া হল। গেটে এসে আমার কালকের রেখে যাওয়া, একটি প্যাকেট অর্থাৎ কোয়েকার ওটস সম্পর্কে জানতে চাইলাম। ডেপুটি জেলার মুশফিক সাহেব আগামী কাল দেবার কথা দিয়ে একটা দিন কষ্ট করতে বললেন। আমি রুমের দিকে রওয়ানা দেয়ার পরপরই ওটা পাঠিয়ে দেয়া হল একজন কারারক্ষীর মাধ্যমে। রুমে নিয়ে এসে দেখি প্যাকেটের মধ্যে সর্বনিম্নস্তরে ছোট ছোট ১০টি প্যাকেট সুন্দর ভাবে সাজানো আছে কিন্তু তার উপরের সারিতে আছে মাত্র ঐ ছোট ছোট প্যাকেটের মত মাত্র দুটি প্যাকেট আমার সেবক সাথে সাথেই বলে ফেলল, নীচে যেভাবে দশটা প্যাকেট সাজানো আছে উপরেও তো এভাবেই ১০টা প্যাকেট সাজানো থাকার কথা। মাত্র দুটো প্যাকেট কেন? সে এটাও বলল নিশ্চয়ই ৮টি প্যাকেট এখান থেকে রেখে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি দেখে অবাক হলাম। জেলারের রুমে জেলার নিজে রেখে দেন সুপারের অনুমতির জন্যে। সেখান থেকে ঐ প্যাকেটের আটটা প্যাকেট গায়েব হওয়া দুঃখজনক এবং জেল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করার জন্যে যথেষ্ট। জিনিস যতই তুচ্ছ হোক, এটা জেলার স্বেচ্ছায় আমানত হিসাবে রেখে দেন। সুপারের অনুমতির পর নিজ দায়িত্বে যেখানে পাঠিয়ে দেয়াই ছিল তার কর্তব্য, সেখানে জিনিসটার প্রায় অর্ধেকই গায়েব হয়ে গেল কী করে? এটাই একমাত্র ঘটনা নয়। এখানকার গেটের অসংখ্য অসদাচরণের ঘটনা দেখার সুযোগ হয়েছে যা এদের কর্তব্যনিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধের মূল্যায়ন করার জন্যে যথেষ্ট। বোধ হয় তারা ভেবে নিয়েছে এরা নিরীহ ভদ্রলোক, এগুলো নিয়ে কিছুই হয়ত বলবে না।

একদিন একজন কারারক্ষী আমাকে বলেছিল, স্যার, অন্যান্য ভিআইপিদেরকে ওরা এক চোখে দেখে আর আপনাকে দেখে ভিন্ন চোখে। আমার জানা মতে আপনার সাথে তাদের ব্যবহার ভিআইপিদের সাথে ব্যবহারের মত মনে হয় না। অন্যদিন আর একজন কারারক্ষী বলল, স্যার, এ জেলখানায় যদি একজনকে ভিআইপি হিসাবে গণ্য করা হয় তাহলেও তো আপনাকেই গণ্য করতে হয়। এরপরও প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি যেন কেমন মনে হয়। আমাকে বন্দী করা হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যে। মামলার সবটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এখানে শুধু আইনী লড়াই যথেষ্ট নয়। রাজনৈতিক ভাবেও এর মোকাবিলা করতে হবে। আমাকে ১৫ জুলাইয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে সাক্ষীগ্রহণের সূচনা বক্তব্যের জন্যে। এর আগে ৮ জুলাইও একই উদ্দেশ্যে তারিখ দেয়া হয়। আমি উপস্থিত হলেও আমাকে ট্রাইব্যুনালে তোলা হয়নি। পরের দিন ৯ জুলাই যেতে বলা হয়। আমাকে ১০ জুলাই চট্টগ্রাম কোর্টে যেতে হবে বিধায় ৯ তারিখে হাজির হওয়া সম্ভব নয় আদালতে এটা জানানোর পর আমাকে উপস্থিত হওয়া থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ নিয়ে আমাদের আইনজীবীদের মধ্যে একটু মতপার্থক্যও হয়। যাহোক আমি ৯ জুলাই চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি ১০ জুলাইয়ে কোর্ট হাজিরার জন্যে। পরে শুনলাম সূচনা বক্তব্য ১৫ জুলাই ধার্য করা হয়েছে।

চট্টগ্রামে সাধারণত পরপর দুই বা তিন দিন একাধারে কোর্ট চলে। কিন্তু যে সাক্ষীর জেরা চলছিল তার অনুপস্থিতির কারণে কোর্ট মুলতবি হয়ে যায়। আমি ১১ জুলাইয়ে কাশিমপুর- ২ এ চলে আসি। ১৪ জুলাই পারিবারিক সাক্ষাতের দিন একজন ডেপুটি জেলার বললেন, ১৫ তারিখে কোর্টের কোন ইনফরমেশন তাদের কাছে নেই। বিকেল নাগাদ আসলে আসতে পারে। কিন্তু বিকেলেও কোন খবর না আসায় ১৫ তারিখে ট্রাইব্যুনালে যেতে হয়নি। এর পরিবর্তে ১৬ জুলাই কোর্টে যেতে হল। ঐ দিন সাক্ষ্য গ্রহণে দীর্ঘ সূচনা বক্তব্য শেষে মাত্র ৫ দিন পরে সাক্ষী গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করা হল। ইতঃপূর্বে এ ব্যাপারে দুই সপ্তাহ বা তিন সপ্তাহ সময়ের ব্যবধানে, কারো জন্যে ১০ দিনের ব্যবধানে সাক্ষী গ্রহণের দিন দেয়া হয়।

এবার ২১ জুলাইয়ে পারিবারিক সাক্ষাতের সময় জানা গেল, সরকার পক্ষ তাদের সাক্ষীর তালিকা এখনও জমা দিতে পারেনি। কোন সাক্ষী হাজির করতেও পারছে না। অতএব ২২ তারিখে আবার কয়েকদিনের জন্যে সাক্ষী গ্রহণ মূলতবি হতে পারে, বাস্তবে হলোও তাই। কোন সাক্ষী হাজির না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করা হল ৫ আগস্ট আর এটা করতে হয়েছে সরকার পক্ষে সাক্ষীর তালিকা পেশ ও সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হবার কারণে। এবারে আমাদের আইনজীবীদের কোন আবেদন ছাড়াই তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়। অথচ প্রচার করা হল ডিফেন্সের আবেদনের প্রেক্ষিতে নাকি তারিখ পিছানো হয়েছে, যা একান্তই অসত্য। আদালতই যদি এভাবে অসত্য ও মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়,

তাহলে ন্যায়বিচারের কোন আশা করা যায় কি? তবে আমাদের আফসোস, আমাদের পক্ষ থেকে এই কথা বলার সুযোগ কেন নেয়া হল না যে, সরকার পক্ষের সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হওয়া ও সাক্ষীর তালিকা জমা দিতে ব্যর্থতার কারণেই ২২ তারিখের পরিবর্তে ৫ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে। পত্রিকায় এই তথ্যটি প্রচার হওয়া খুবই দরকার ছিল। রাজনৈতিক দৃষ্টিতে এমনটি করা খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু আমাদের আইনজীবী অথবা সংগঠনের কেউ এটা অনুধাবন কেন করতে পারলেন না, আমার বুঝে আসলো না।

মেঝ ছেলে তার প্রথম সন্তানকে দেখার জন্যে গতকালই লন্ডন চলে গেছে, আসবে আগামী মাসের (আগস্ট) ১০ তারিখে। আমার সাক্ষী গ্রহণ ও সাক্ষীর জেরা শুরু হবে ৫ আগস্ট থেকে। যদিও তার অনুপস্থিতিতে কোন কাজেই তেমন কোন অসুবিধা হবার কথা নয়, তবুও নিজের একটা মাত্র ছেলে ২ বছর যাবত আমার খোঁজ খবর নিয়ে আসছে। তার অনুপস্থিতিতে আমার স্ত্রীও একেবারে একা হয়ে পড়ল। আমি তাকে কাছে পেলে যে প্রশান্তি অনুভব করতাম, কিছু দিন পর্যন্ত তা থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে। তবে তার কাছ থেকে শুনেছিলাম, ইনশাআল্লাহ পাবনা থেকে কোন সাক্ষী আসবে না। আপাতত তা সত্যই মনে হচ্ছে। তদন্ত কমিটি কিছু দিন আগে প্রস্তাবিত সাক্ষীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা বলার চেষ্টা করে সুবিধা করতে পারেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার একান্ত নিকটের এলাকার লোকদের বাড়ী বাড়ী গিয়েও সুবিধা করতে পারেনি। সরকারী আইনজীবী সময়মত সাক্ষীর তালিকা দিতে ব্যর্থ হওয়া ও সাক্ষী হাজির করতে না পারায় মনে বেশ কিছুটা প্রশান্তি পাচ্ছি। আল্লাহ তার কুদরতি ব্যবস্থায় ওদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেবেন, এ বিশ্বাস আগেই করতাম, এখন তার কিছু কিছু আদালতে প্রকাশ পাওয়া শুরু করেছে। আল্লাহ তার মজলুম বান্দাদের ফরিয়াদ কবুল করবেন, মজলুমদের পক্ষে তার অসংখ্য বান্দা গ্রামে গঞ্জে দেশে বিদেশে প্রাণ উজাড় করে দোয়া করছে, সে দোয়া আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন। এই বিশ্বাসকে সম্বল করে নিশ্চিন্তে সময় কাটাচ্ছি। আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালা ও কুদরতি ব্যবস্থার প্রতি অধীর আগ্রহে চেয়ে আছি। আল্লাহ অবশ্যই মজলুমদের ফরিয়াদ কবুল করবেন।

গত তারিখে চট্টগ্রামে হাজিরা দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর শামসুল ইসলাম এমপির সাথে কারাগারেই কথা হয়। তার কাছে শুনলাম গ্রাম পর্যায়ের কর্মী সমর্থক শুভাকাঙ্ক্ষীরা যে কত কাতর কণ্ঠে প্রাণ উজাড় করে আমাদের জন্যে দোয়া করছেন, তা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। এত মানুষের অন্তরের কান্না হৃদয়ের ফরিয়াদ আল্লাহ অবশ্যই শুনবেন, যদি তিনি চান। আল্লাহ সীমাহীন ধৈর্যশীল। তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের পরীক্ষা কতটা করবেন, এটা তাঁরই একক এখতিয়ার। তেমনিভাবে তাঁর প্রিয় বান্দাদের প্রতিপক্ষকে কতটা সময় দেবেন, তাদের জন্যে রশি কতটা ঢিলা করবেন, এটা তাঁরই একক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে, আল্লাহ অভয় দিয়ে বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের ব্যাপারে অনেক বেশি ওয়াকেফহাল আছেন। আল্লাহই তোমাদের অভিভাবক হিসাবে যথেষ্ট, আল্লাহই তোমাদের সাহায্যকারী হিসাবে যথেষ্ট (সূরা নিসা)। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই অভয় বাণী শোনার পর কোন ঈমানদারের মনে কোন রূপ দ্বিধা সংশয় বা হতাশা নিরাশার স্থান থাকতে পারে না।

আমার মেঝ ছেলে মোমেন তার প্রথম সন্তানকে দেখার জন্যে গত পরশু লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল। যেতে পারছে কিনা জানার সুযোগ হয়নি। তবে আশা করি সে যেতে পেরেছে এবং আল্লাহর রহমতে ভালভাবেই পৌঁছে গিয়ে থাকবে। আমার সামনের সপ্তাহের সাক্ষাতের দিনই চট্টগ্রাম রওয়ানা করতে হবে। পরিবারের লোকেরা যদি বুদ্ধি করে একটু সকালে আসে, তাহলে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেই আমি চট্টগ্রাম রওয়ানা করতে পারব। ঠিক মত এই খবরটা পৌঁছানো খুব সহজ নয়। মোমেন থাকলে কোর্টে আমাদের অন্যান্য ভাইদের কাছ থেকে সহজেই খবরটা জানতে পারত। গতকাল বৃহস্পতিবারে জেলারকে আসার জন্যে সুবেদারের মাধ্যমে খবর দিয়েছিলাম, তিনি এসেছিলেন। তাকে বললাম, ২৮ জুলাই শনিবারে আমাকে চট্টগ্রাম যেতে হবে। আবার ঐ দিনই আমার পারিবারিক সাক্ষাৎ আছে। আমি যেন পরিবারের লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করেই চট্টগ্রাম রওয়ানা করতে পারি এমন ব্যবস্থা করলে আমার জন্যে ভাল হবে। এজন্যে পুলিশের স্কোয়াড যেন বেশি সকালে না এসে সকাল ১০টার দিকে আসে, আর আমার পরিবারের লোকদেরকেও সকাল ৯টার মধ্যে আসতে বলতে হবে। সেই সাথে আমার একটা জরুরি ওষুধ আনার জন্যেও বলতে হবে। জেলার বাবু তাৎক্ষণিকভাবে সুবেদারকে আমার পরিবারের ফোন নম্বর ও ওষুধের নামটা লিখে নিয়ে জানিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। আমি আশা করছি চট্টগ্রাম যাবার আগে তাদের সাথে ইনশাআল্লাহ সাক্ষাৎ হবে।

গত ২৮ জুলাই সকালে ৯টার দিকে আমাকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে বলা হল। ৯-৩০টাতে একজন কারারক্ষী এসে খবর দিল। পরিবারের লোকেরা দেখা করার জন্যে এসেও উপস্থিত। এ দিকে চট্টগ্রামে যাবার জন্যে গাড়ী এবং পুলিশের স্কোয়াডও এসে গেছে। আমি ৯টার দিক থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম। ১০/১২ মিনিটের মধ্যে জেল গেটে পৌঁছে গেলাম। এবার সাক্ষাতে আমার ছেলে মোমেন আসেনি। কারণ সে তার প্রথম সন্তান ছেলেকে দেখার জন্যে লন্ডন গিয়েছে। এবারে সে চট্টগ্রামও যেতে পারবে না। আমি একটু সংক্ষিপ্তভাবে সাক্ষাৎ সেরে চট্টগ্রাম রওয়ানার চিন্তা করছিলাম। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ সময় শেষের কোন সংকেত দেয়নি। আমরা নিজেরাই জেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিলাম আমার কথা শেষ করেছি। এবার চট্টগ্রামের জন্যে রওয়ানা করা যেতে পারে। পরিবারের সদস্য অর্থাৎ আমার স্ত্রী ও বড় মেয়ে দুজনেই এবার আমার সাথে সাথে জেল গেট পার হয়ে গাড়ীর কাছে এসে পৌঁছল। তারা দুজনে আমাকে বিদায় দিল। আমিও তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।

এ যাত্রায় রমজান মাস হওয়ার কারণে দুপুরের খাবারের কোন প্রয়োজন নেই। তবে এস্তেনজা অজু ও নামাজের জন্যে আমার পছন্দের একটা সিএনজি ফিলিং স্টেশনে সময় মত থামতে বলায় পুলিশের পক্ষ থেকে এবার আর তেমন কোন আপত্তি উঠেনি। আমরা জোহরের নামাজের সময় কুমিল্লা শহর পার হয়ে এডভান্স সিএনজি ফিলিং স্টেশনে কিছুক্ষণের জন্যে যাত্রা বিরতি করি। এখানে নামাজ আদায় শেষে আবার চট্টগ্রামের পথে রওয়ানা দেই। রওয়ানার সময় ভায়েরা আমার জন্যে এবং পুলিশের জন্যে (ড্রাইভার সহ) ইফতারের প্যাকেট দিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে। অবশ্য আমরা ইফতারের প্রায় একঘণ্টা আগেই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে যাই। আমাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দিয়ে তাদের অনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পুলিশের স্কোয়াড বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। ঢাকার পথে কিছুদূর এগিয়ে গিয়েই তারা ইফতার করতে পারবে। রাতের খাবারও খেয়ে নিতে পারবে।

আমি চট্টগ্রাম জেল গেটের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আমার নির্দিষ্ট রুমে পৌঁছে এস্তেঞ্জা অজু সেরে বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ইফতার করলাম। সাথে আনা প্যাকেট ছাড়াও এখানকার তৈরি কিছু ইফতার সামগ্রী আমার জন্যে ব্যবস্থা করা হয়। আমি সেহরীতে দুধ খাওয়া এবং তারাবির আগে চা খাওয়ায় অভ্যস্থ। কিন্তু রুমে ফ্লাস্ক না থাকায় গরম পানির অভাবে দুধ ও চা বানানো যায় না। সমস্যাটা চট্টগ্রামের আমাদের এক ভাই আব্দুর রহীম সাহেবকে জানাতে বলেছিলাম। মিঠু সাথে সাথেই তাকে এটা জানিয়ে দেবার কারণে আমি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছার আগেই গরম পানি ভর্তি একটি সুন্দর এবং বেশ বড় সাইজের ফ্লাস্ক আমার রুমে পৌঁছানো হয়। ফলে চা ও দুধ বানাতে আর কোন সমস্যা হয়নি।

এবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আমাকে অবস্থান করতে হয় চার রাত এবং তিন দিন। ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন দিন কোর্ট চলার পর ১ আগস্ট, ‘১২, সকাল ৯ টা ৩০ মিঃ চট্টগ্রাম থেকে কাশিমপুর- ২ কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই থানায় একটু যাত্রা বিরতি করে এস্তেঞ্জা সেরে নিলাম। জোহরের নামাজের জন্যে আমার পছন্দের সিএনজি ফিলিং স্টেশনে যাত্রা বিরতির কথা বলায় পুলিশের স্কোয়াড লীডার একটু মৃদু আপত্তি জানিয়ে মিডিয়া সম্পর্কিত ভয়ের কথা উল্লেখ করে। তাদের সাথে থাকা এসবিএর লোকটা তাকে বুঝিয়ে বলল, উনি যেখানে নামাজ পাড়ার কথা বলেছেন ওটা খুবই নিরাপদ ও নিরিবিলি। তাছাড়া নামাজ পড়ার সুযোগতো দিতেই হবে।

আমরা ঠিক জোহরের সময় কুমিল্লার ঐ নির্দিষ্ট সিএনজি স্টেশনে পৌঁছে যথারীতি নামাজ আদায় করে ১ টা ৫০ এর দিকে ঢাকার পথে (কাশিমপুর- ২ কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশ্যে) রওয়ানা দিলাম। এবারও আমাদের সাথে ইফতারের প্যাকেট দিয়ে দেয়া হল।

আল্লাহর মেহেরবানীতে অন্যান্য দিনের তুলনায় যানজটের ঝামেলা এবার একটু কমই ছিল। ফলে বিকেল সাড়ে ৫ টায় কাশিমপুর-২ কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে যাই। অবশ্য এখনকার ব্যবস্থাপনা একটু ভিন্ন ধরনের হবার কারণে গেটে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। যাইহোক আমি ইফতারের নির্দিষ্ট সময়ের বেশ আগেই রুমে পৌঁছাই এবং এস্তেনজা অজু সেরে এখানকার সাথীদের সাথে ইফতার করতে সক্ষম হই। আমার সাথে কুমিল্লার মায়ামী রেস্তোরার প্যাকেট ইফতারীতে সবাই শরীক হন। এখানকার তৈরি ইফতারের সাথে আমার আনা ঐ ইফতারের মত সামান্য ইফতারীও যোগ হওয়ায় বেশ ভালই লাগল।

এবার চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারে মোট চার দিন ইফতার করতে হয়। প্রথম দিন কুমিল্লা থেকে সাথে নিয়ে আসা প্যাকেটের সাথে কারাগারের বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি ইফতার যোগ হয়। পরে দুই দিন অর্থাৎ ২৯ জুলাই ও ৩০ জুলাই চট্টগ্রামের আইনজীবী ভায়েরা কোর্ট শেষে ফেরার পথে ইফতারের জন্যে বিশেষ মানের হালিমের ও ফিরনীর দুটো প্যাকেট দিয়ে দিলে ওগুলো আরো তিনজনকে ভাগ করে দিয়ে বাকীটা আমি খেয়েছি। কিন্তু ৩১ জুলাই কোর্ট একটু সকাল সকাল শেষ হওয়ায় ইফতারী দিতে পারেনি। তারা আমাকে বলল ওটা জেল গেটে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। আমি কোর্ট থেকে জেল গেটে পৌঁছেই রুমে ফেরার আগে একজন ডেপুটি জেলারকে বলে আসলাম, আমার ইফতারী আনলে রুমে পৌঁছার ব্যবস্থা করার জন্যে। এসেই নামাজ আদায় করে আমার সেবক আব্দুল হালিমকে গেটে গিয়ে খোঁজ নিতে বললাম, সেই সাথে আমার ব্লাড প্রেসার চেক করার জন্যে ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টকে আসার জন্যে খবর দিতে বললাম। আঃ হালিম গেট থেকে এক প্যাকেট জিনিস ও এক ছড়ি বাংলা কলা নিয়ে এল। আমার মনে হল এটা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। নিশ্চয়ই আরো কিছু দিয়ে থাকবে যা ঢুকতে দেয়নি বা অন্য কিছু ঘটে থাকবে। আমি সুবেদারকে ডেকে এনে বিষয়টি জানালাম। খোঁজ খবর নিয়ে বলল এছাড়া আর কিছু নাকি আসে নাই।

আমার মনে সন্দেহ দূর হল না। পরের দিন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিদায়ের মুহূর্তে মিঠুর সাথে দেখা হওয়ায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কালকে ইফতার এর জন্যে শুধু জিলাপি ও কলাই পাঠিয়েছিল নাকি আরো কিছু পাঠিয়েছিল যা আমার কাছে পৌঁছে নাই। মিঠু বলল আমিতো ওনাদের সাথে গেট পর্যন্ত এসেছিলাম। অনেক কিছুই তারা এনেছিল। কিন্তু জিলাপি এবং কলা ছাড়া বাকীগুলো ফেরৎ দিয়েছে। তারা ভেতরে পাঠানোর জন্যে এক দুই আইটেম ছাড়া গ্রহণ করতে রাজি হয়নি।