রাজনীতিবিদরা সাধারণত লেখক হয়ে ওঠেন না। তারা হয়ে থাকেন সাধারণত বাকপটু। মানুষকে মুগ্ধ করে দেওয়ার মতো,কাছে টানার মতো বাচনভঙ্গি তাদের গুণ। কিন্তু মাওলানার মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, আলোচক, সুলেখক, পন্ডিত ও দ্বীনের দাওয়াতের কলমসৈনিক। ছোটবেলা থেকেই তার পত্রপত্রিকায় লেখার অভ্যাস ছিল। তার লেখাগুলো তৎকালীন প্রথমশ্রেণির পত্রিকাগুলোতে গুরুত্বসহকারে ছাপা হতো। রাজনৈতিক জীবনে এসেও যেসব বই রচনা করেছেন, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের শীর্ষ নেতৃত্বে থেকে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্¦ পালনের পরও তার লেখনীর মান এবং গুরুত্ব নিয়ে আলোচনার গুরুত্¦ রাখে।

ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রতিশোধের শিকার হয়ে ২০১৬ সালের ১০ মে দিবাগত রাতে ইসলামী আন্দোলনের এ অকুতভয় সিপাহসালার মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে যান। মজলুম এ মানুষটি ২০০৮ সালের ১৮ই মে এ্যারেস্ট হয়ে ৫৬ দিন, একই বছরের নবেম্বরে এ্যারেস্ট হয়ে ১০ দিন এবং ২০১০ সালের ২৯ জুন এ্যারেস্ট হয়ে আমৃত্যু কারাগারে বন্দী ছিলেন। কারাগারের অসহ্য স্মৃতি বর্ণনা করে গেছেন- তিনি তাঁর এই লিখনীতে। এছাড়াও এ লেখায় তিনি তাঁর অগনিত ভক্তদের অনেক জিজ্ঞাসার জবাব রেখে গেছেন।

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী রচিত বইগুলো নিয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে কয়েকটি বই আমাকে অধ্যয়ন করতে হয়েছে। বিশেষ করে জীবনের শেষ দিকে এসে যে বইগুলো রচনা করেছেন সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কারাগারের দিনগুলোতে কিংবা ফাঁসির রায়ের পর তার যে ভাবলেশ হীন জীবন আমরা দেখতে পাই তার কিছু আলোকপাত করবো।

মাওলানা নিজামী সংগঠনের দায়িত্ব এবং রাজনৈতিক ব্যস্ততার মধ্যেও ইসলামী সাহিত্য ও গবেষণায় মৌলিক চিন্তার আলোকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বাল্যকাল থেকেই তার লেখালেখির প্রতি ঝোক ছিল। তিনি বিভিন্ন ম্যাগাজিন সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন। তার সৃজনশীল গবেষণাধর্মী এবং তথ্য সমৃদ্ধ লেখা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। রাজনৈতিক ও ইসলামী আন্দোলনের ব্যস্ততার মধ্যেও তার ৬১টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রতিটি রচনায় মুন্সিয়ানার ছাপ পাওয়া যায়। বইগুলো পড়লেই তার অধ্যয়নের পরিধি, জ্ঞানের গভীরতা, প্রজ্ঞা ও পান্ডিত্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি যে ইসলামী জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বৈশ্বিক জ্ঞান অর্জনে তৎপর ছিলেন তা তার রচিত বইগুলো-ই প্রমাণ বহন করে।

মাওলানা নিজামীর ‘ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ’ বইটি বহুল আলোচিত। বইটিতে ইসলামের প্রতি মানুষের অজ্ঞতা প্রশমনের যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। ২০০৫ সালে প্রকাশিত বইটিতে দেখা যায় ৯/১১ এর পর গোটা দুনিয়াকে বিশেষ করে মুসলমানদেরকে যে পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়, তাতে এরকম বই রচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন মাওলানা নিজামী। তিনি তার বইয়ে বলেন, টুইন টাওয়ার কে ধ্বংস করেছে, পেন্টাগনে কারা বিমান ধ্বংস করেছে তা প্রমাণিত নয়। বিশ্ব মুসলিমের অজানা এক ব্যক্তিকে এবং অচেনা ইসলামী নামের ভূইফোড় একটা গ্রুপকে সন্দেহ করে গোটা মুসলিম উম্মাকে আসামী বানানো হয়েছে। ইসলামকে বলা হয়েছে সন্ত্রাসী ধর্ম। আল কুরআনকে ধরে নেওয়া হয়েছে সন্ত্রাসের উৎস। তিনি তুলে ধরেন কমুনিজমের পতনের পর একমাত্র ইসলামই পশ্চিমা ব্যবস্থার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থেকে যায়। সব বিবেচনায় এটাই প্রমাণিত হয় এই প্রতিদ্বন্দ্বীকে পথ থেকে সরানো-ই চলমান সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের লক্ষ্য। এই যুদ্ধে তাদের প্রধান হাতিয়ার হলো ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হওয়ার অভিযোগ এনে তাদেরকে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের বলি বানানো।

মাওলানা নিজামী অনুধাবন করেন যে ঐ মুহুর্তে ইসলামের সঠিক পরিচয় বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা এবং ইসলামের নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করা সময়ের দাবি। তিনি এই বইটিতে বাতিলের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোকপাত করেন; সেই সাথে ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ বিশ্ববাসীর সামনে আনেন।

‘ইসলামী আদাবে জিন্দেগী’ নামের আরেকটি বই সবার কাছে প্রসংশিত। বইটি বার বার পড়তে মাওলানা নিজামী তার স্ত্রী ও সন্তানদের নসিহত করেছেন। মূলত জেলখানাতে বসে বইটি লেখা। তিনি বইটিতে জীবন ধারণের ক্ষেত্রে ইসলামের আদাব বা নিয়মগুলোকে সহীহ ও শুদ্ধভাবে তুলে ধরেছেন। মাওলানা নিজামী বইটিতে বলেছেন, একজন মুসলমান কার সাথে কি এবং কিভাবে আচরণ করবে। তিনি বলেন, ইসলামী আদাবে জিন্দেগী অনুসরণ করে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে হলে প্রথমেই আল্লাহর কুরআন ও রাসুলের সুন্নাত ও সীরাতের প্রতি যে স্বরূপ আচরণ বা আদব রক্ষার দাবি করে, সে দাবি পূরণে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বইটেতে কুরআনের প্রতি, সিরাতে রসূল ও সুন্নাতে রাসূলের প্রতি প্রতি আদাব, সালাম ও মূসাফাহার আদাব, সালামের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় রীতি, সামাজিকতায় ইসলামী আদাব, মজলিসের আদাব, মেহমানদারীর আদাব, খানাপিনার আদাব, পোশাক পরিচ্ছদের আদাব, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা শুশ্রƒষার আদাব, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব, জানাজায় অংশগ্রহণ,সমবেদনা ও কবর জিয়ারত, কবর জিয়ারত প্রসঙ্গে, মসজিদের আদাব, সাধারণ আদাব ও ইসলামী আদাবে জিন্দেগীর ক্ষেত্রে দুটি হাদিসের সতর্কবাণী নিয়ে আলোকপাত করেছেন। মূলত বইটিতে একজন মুসলমানের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সামাজিক জীবনের প্রতিটি ধাপ আলোকপাত করেছেন। বইটি পড়লে বোঝা যায় তিনি ইসলাম সম্পর্কে কতটা প্রাজ্ঞ এবং পান্ডিত্য নিয়ে রচনা করেছেন। ‘কুরআন হাদিসের আলোকে রাসুল মুহাম্মদ (সা:)’ বইটিও তার জেলখানাতে থাকা অবস্থায় লেখা। তিনি ইসলামী জিন্দেগী ধারণে এই বইটি বার বার পড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

তার লিখনীর পান্ডিত্য এবং ভাষার লালিত্য মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা দেখা যায় ‘কারাগারের স্মৃতি’ নামের বইটিতে। প্রথম পর্বে তিনি লিখেন, ১৮ মার্চ ২০১০ তারিখের জনকণ্ঠ, কালেরকণ্ঠ, সমকাল, যুগান্তর ও প্রথম আলো’র একটি সিন্ডিকেটেড রিপোর্টকে ভিত্তি করেই আমাকে, সাঈদী সাহেব ও মুজাহিদ সাহেবকে ‘জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবার’ অভিযোগে অভিযুক্ত করে সাজানো মামলার কথা বলছি। পত্রিকাগুলোর সিন্ডিকেটেড রিপোর্টটি ছিল ইসলামী ছাত্র শিবিরের উদ্যোগে আয়োজিত ‘সিরাতুন্নবী’ অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরীর আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের একটা বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে তার কোন শত্রু ছিল না। সকলের কাছে তিনি ছিলেন পরম বিশ্বস্ত আল-আমীন। কিন্তু নবুওয়াত প্রপ্তির পর আল্লাহর দিকে আহ্বান জানানোর সাথে সাথে বিরোধিতা শুরু হয়। ধাপে ধাপে সে বিরোধিতা চরম আকার ধারণ করে। এটা ঐতিহাসিক ও সত্য ঘটনা। কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী অতীতেও এভাবে সকল নবী এবং রাসূলের (আ.) দাওয়াতের বিরোধিতা করেছে। মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ রাসূল। তারপরে যেহেতু আর কোন নবী আসবেন না, অতএব মানব জাতিকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানানোর দায়িত্ব তাদেরকেই পালন করতে হবে যারা শেষ নবীর উম্মত। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন শেষে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার আগে তাঁর উম্মতের উপরই এ দায়িত্ব অর্পণ করে গেছেন। সর্বশেষ নবী (সা.) সহ অতীতের নবী রাসূল দ্বীনের এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেভাবে বাধা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন, শেষ নবীর পদাংক অনুসারী উম্মতগণও ঐ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একইভাবে বাধা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে, এটা একান্তই স্বাভাবিক। আল্লাহর কুরআন ও রাসূল (সা.)-এর হাদিসে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে। ঐ সাংবাদিক বন্ধুদের যদি এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসের শিক্ষা সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণাও থাকত, তাহলে তাদের কারো কারো রিপোর্টে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা হত না। তাছাড়া সাংবাদিকের কাজ তো বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্ট করা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মত ক্ষোভ প্রকাশ তাদের কাজ হতে পারে না। উক্ত অনুষ্ঠানে আমি যেহেতু উপস্থিতই ছিলাম না, তাই মাওলানা রফিকুল ইসলাম আসলে কিভাবে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, তা আমার জানার সুযোগ হয়নি। তবে দৈনিক সংগ্রাম তার বক্তব্য বিস্তারিত রিপোর্ট করেছে। দৈনিক সংগ্রামের ঐ রিপোর্ট পড়লে জনকণ্ঠ, প্রথম আলো, যুগান্তর, কালেরকণ্ঠ ও সমকালের রিপোর্ট যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং রীতিমত তথ্য সন্ত্রাস এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। আমরা এখানে দৈনিক সংগ্রাম পরিবেশিত রিপোর্ট থেকে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের বক্তব্যটি উদ্ধৃত করছি। ক্সদনিক সংগ্রাম তার প্রকাশিত রিপোর্টে লিখে, ‘রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ (সা.) নবী হিসাবে যেমন শ্রেষ্ঠ তেমনি একজন মানুষ হিসাবেও তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ। আর এই শ্রেুষ্ঠ মানুষটির উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে যে কিতাবটি নাজিল হয় সেটিও নিঃসন্দেহে অবশ্যই শ্রেষ্ঠ কিতাব ছিল। ঠিক এভাবেই এই কিতাবটি যে বা যারাই অনুসরণ করে জীবন গড়ার চেষ্টা করবে তারাই হবে শ্রেষ্ঠ জাতি। কিন্তু সেই শ্রেষ্ঠ মানুষটি যখনই নবী হিসাবে তার রবের প্রতি মানুষকে ডাকতে শুরু করলেন, তখনই তিনি হলেন পাগল। তার উপর নেমে এল অত্যাচার আর নির্যাতন। এমন কি তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হল। বর্তমানে যারা কুরআন আর হাদিসের পক্ষে কথা বলছে তাদের উপর একইভাবে অত্যাচার-নির্যাতন হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী দলের আমীর নির্বাচিত হওয়ার আগে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ছিল না। কিন্তু যখনই তিনি আমীর নির্বাচিত হলেন তখন থেকেই মিথ্যা আর নানা কল্পকাহিনী বানিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু হল। বর্তমানে রাজনীতি থেকে ইসলামকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই বাংলার জমিনে যেমন আল্লাহর বিধানকে ও রাসূলের আদর্শকে নিষিদ্ধ করা যাবে না, তেমনি জামায়াত ও শিবিরকেও নিষিদ্ধ করা যাবে না। উপরিউক্ত বক্তব্যের মধ্যে রাসূলের (সা.) সাথে কাউকে তুলনা করার বিষয়টি সাংবাদিকদের একটি অংশ কিভাবে আবিষ্কার করলেন তা ভাবতে অবাক লাগে। শুধু আবিষ্কার নয়, তারা নাকি রীতিমত ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের সিন্ডিকেটেড রিপোর্টে তাদের সেই ক্ষোভেরই নাকি প্রকাশ ঘটান। আসলে ক্ষোভ নয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বক্তব্যকে বিকৃত করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। ঐসব পত্রিকায় উদ্দেশ্যমূলক হেডিং ও বিকৃত সংবাদ পরিবেশনের প্রতিবাদ করে মাওলানা রফিকুল ইসলামের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়। কিন্তু ঐসব পত্রিকায় তার প্রতিবাদ ছাপা হয়নি। দেখা যাচ্ছে, তাদের এই বিকৃত রিপোর্টই আলোচ্য মামলার একমাত্র ভিত্তি।

কিন্তু যদি ঐ সিন্ডিকেটেড রিপোর্টই মামলার সব হয়, তাহলে তো কেবল মাত্র রিপোর্টে উল্লেখিত বক্তব্য প্রদানকারীকেই একমাত্র দায়ী করে বা বিবাদী করে মামলা করা হত। অন্যদেরকে এ মামলায় জড়ানো হল কেন? যদি ধরে নেই ঐ সভা মঞ্চে উপস্থিত থেকেও কথিত ঐ বক্তব্যের প্রতিবাদ করেননি তাদেরকেই আসামী করা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন, উক্ত সভা মঞ্চের সকলকে তো আসামী করা হয়নি। সভার শ্রোতারাই বা বাদ যাবেন কেন? রিপোর্টের আলোকে দেখা যায় সাংবাদিকগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। সাংবাদিকদের এই বিক্ষুব্ধতার চেয়ে তো বেশি বিক্ষুব্ধ হবার কথা শ্রোতাদের। অথচ শ্রোতাদের কোন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কথা কোন পত্রিকাতেই উল্লেখ করা হয়নি। বাদী পক্ষের দাবি অনুযায়ী মাওলানা রফিকুলের বক্তব্যে উল্লাস প্রকাশ এবং হাতে তালি দেবার কারণেই

নাকি মঞ্চে উপস্থিত মাওলানা সাঈদীসহ কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে। উল্লেখ্য কোন পত্রিকার রিপোর্টেই আমাকে এবং জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল জনাব মুজাহিদকে উপস্থিত দেখানো হয়নি। আর বাস্তব সত্য যে আমরা দুজনের কেউই উক্ত সমাবেশে উপস্থত ছিলাম না। মজার ব্যাপার হল ঐ সিন্ডিকেটেড রিপোর্টে শরীক একটি পত্রিকা ‘কালের কণ্ঠ’ একই কলামে ঐ সমাবেশের রিপোর্টের নীচে আর একটি অনুষ্ঠানে আমার এবং মুজাহিদ সাহেবের উপস্থিতির এবং বক্তব্য প্রদানের কথা উল্লেখ করেছে। বিচারিক আদালত মামলাটি আমলে নেয়ার যোগ্য কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্যে পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করতেন, তাহলে অবশ্যই মামলাটি বিবেচনায় নিতেন না। আর বিবেচনায় নিলেও অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত ছিল না এমন ব্যক্তিদের নাম অবশ্যই আসামীর তালিকা থেকে বাদ দিতেন। আমাদের জানা মতে ঢাকার সিএমএম কোর্টের সংশ্লিষ্ট সম্মানিত ও বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি অনেক দিন পর্যন্ত আমলে নেননি বা নিতে চাননি। রাজনৈতিক চাপের মুখেই আমলে নিতে হয়েছে। ফেনী জেলার আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি শুধু পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে আমলে নিতে রাজি হলেন। একটি মামলার আসামী হিসাবেই আমাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারিক আদালতে হাজিরা দেবার পর ঐ মামলার জামিন মঞ্জুর করা হলেও এ মামলার জামিনের আবেদন নিষ্পত্তির আগে অনেকগুলো কাল্পনিক ও সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর ও রিমান্ডের আবেদনসহ সরকার পক্ষীয় বিজ্ঞ আইনজীবীদের চাপের মুখে যে সংশ্লিষ্ট মামলা ছাড়া হঠাৎ করে এত গুলো মামলায় গ্রেফতার দেখানো ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনগুলো কিভাবে উপস্থাপিত হল এবং মঞ্জুরও হল তা আজো আমার বুঝে আসেনি। আসলে সেদিন ঢাকা সিএমএম আদালতের পরিবেশ কোন আদালতের জন্যে মানানসই পরিবেশ ছিল এটা কোন বিবেকবান ব্যক্তির পক্ষে বলা সম্ভব নয়। আদালতে উভয় পক্ষের আইনজীবীগণ স্ব স্ব পক্ষে আইনগত দিক তুলে ধরে ঠাণ্ডা মাথায় যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য উপ¯াপনের কথা। কিন্তু এখানে তার পরিবর্তে পরিলক্ষিত হয়েছে রাজ‣নতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যে রীতিমত বলপ্রয়োগের হুমকিসহ অশালীন উক্তির মাধ্যমে প্রতিপক্ষের আইনজীবীদের কথা বলতে না দেয়ার ফ্যাসিবাদী প্রয়াস এবং বিবাদীদের বিরুদ্ধে মানহানিকর ও চরিত্র হনন করার এক অশুভ প্রয়াস। যা ন্যায়বিচারের প্রতি হুমকি হিসাবেই বিবেচিত হবার যোগ্য।