মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মাত্রা নতুন উচ্চতায়। শনিবার রাতে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) মহাকাশ ইউনিট দখলকৃত ইসরায়েলি ভূখণ্ডে চালিয়েছে বহুল আলোচিত ও অভূতপূর্ব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। অভিযানের নাম—‘ইয়া আলী ইবন আবি তালিব’। এটি শুধু কৌশলগত নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক বার্তাও বহন করে।

হামলাটি ঈদ আল-ঘাদীরের সময়সূচির সঙ্গে সময়মতো সাজানো হয়েছে, যা ইরানের শিয়া ধর্মীয় পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ এক নিদর্শন। ইসলামি প্রতিরোধ এবং শত্রু মোকাবেলায় আদর্শিক অবস্থান স্পষ্ট করতেই এই ‘সাইবার-সাইকোলজিকাল’ সমন্বয়, বলছে বিশ্লেষকেরা।

এই অভিযানে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর প্রযুক্তিগত দিক বিশ্লেষণ করলে ইরানের বার্তা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে—এটি ছিল নিছক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং একটি প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরোধ কৌশল।

ইমাদ: গাদরের উন্নত সংস্করণ, ১,৭০০ কিমি পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র নিশানার উপর ‘মনিটরিং ও রিডিরেকশন’ সক্ষমতা রাখে।

গাদর: শাহাব-৩-এর বংশধর, তিন ধরনের বৈচিত্র্য (এস, এইচ, এফ), সর্বোচ্চ ২,০০০ কিমি পাল্লার।

খাইবার শেকান: ডেভিডস স্লিং ও অ্যারো-৩ প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেদে সক্ষম, কঠিন জ্বালানিতে দ্রুত প্রস্তুতিযোগ্য এবং নির্ভুল।

এই তিন ক্ষেপণাস্ত্র একত্রে ব্যবহার করার অর্থ, ইরান ইসরায়েলের ডিফেন্স আর্কিটেকচারের সব স্তর ভেদ করার বার্তা দিয়েছে।

ইরান দাবি করেছে, এই আক্রমণ ছিল শুক্রবার ও শনিবার সকালে ইসরায়েলের হামলায় নিহত ইরানি সেনা ও সাধারণ নাগরিকদের জন্য পাল্টা প্রতিক্রিয়া। তবে কৌশলগতভাবে এটি ছিল একটি ‘ক্যালকুলেটেড এসকালেশন’।

আইআরজিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি দখলকৃত ভূখণ্ডে তাদের এ পর্যন্ত পরিচালিত সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র অভিযান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলা ইরানের প্রতিরক্ষা কৌশলে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় নির্দেশ করে। এটি ছিল ‘ডিটারেন্স বাই ক্যাপাবিলিটি’ প্রদর্শনের এক বাস্তব উদাহরণ, যেখানে কেবল বার্তা নয়, বাস্তবতাও মাটিতে নেমে আসে।

ডেড সি ও পশ্চিম তীর অঞ্চলে সতর্কতা সাইরেন বাজে, এবং ইসরায়েলের বিমানবাহিনী দ্রুত কিছু ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র এখনো পুরোপুরি প্রকাশিত হয়নি। আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরক্ষামূলক প্রস্তুতি থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই হামলা পরিস্থিতিকে কেবল উত্তপ্ত করেনি, বরং পরবর্তী সংঘাতের ভিতও রচনা করে ফেলেছে।