সৌদি আরবে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে মিলিত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসময় তিনি শারাকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানান। বৈঠকের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ইসলামপন্থি নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়—যা ওয়াশিংটনের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বুধবার (১৪ মে) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই সংবাদ প্রকাশ করে।

সৌদি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উপস্থিতিতে ট্রাম্প ও শারা করমর্দন করছেন। বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান।

হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব ‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) জানান, ট্রাম্প আহ্বান জানিয়েছেন—শারা যেন সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর মতো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেন। ২০২০ সালে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেন, সৌদি আরবও একসময় নিজস্ব শর্তে ওই চুক্তিতে যোগ দেবে।

তবে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর সৌদি আরব স্পষ্ট জানায়, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়।

রিয়াদে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে আমরা এগোচ্ছি। এর শুরুটা শারার সঙ্গে এই বৈঠকের মধ্য দিয়েই।”

এদিকে ইসরায়েল এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, শারার প্রশাসনের অতীতে আল-কায়েদার সঙ্গে যোগসূত্র ছিল, ফলে সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি থেকেই যায়। যদিও শারা ২০১৬ সালেই আনুষ্ঠানিকভাবে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে দীর্ঘ সংঘাতের পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর শারা দামেস্কভিত্তিক সরকার পুনর্গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সিরিয়ার জন্য বড় সুবিধা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতে মানবিক সংস্থা, বিনিয়োগকারী ও বাণিজ্যিক অংশীদারদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে। তবে ইসরায়েল জানিয়েছে, দক্ষিণ সিরিয়ায় ইসলামপন্থিদের উপস্থিতি তারা মেনে নেবে না।

আল-আসাদ পতনের পর ইসরায়েল দক্ষিণ সিরিয়ায় হামলা জোরদার করে। ফলে দেশটির সেনাবাহিনীর বড় অংশের অস্ত্রধারী ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

চলতি বছরের মার্চে সরকারের অনুগত বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘর্ষে শত শত আলাওয়ি সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হন। যুক্তরাষ্ট্র সে ঘটনায় কড়া নিন্দা জানায়।

শারা একসময় আল-কায়েদার সিরীয় শাখার প্রধান ছিলেন এবং ২০০০-এর দশকে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পাঁচ বছর কারাভোগ করেন। তবে গত ডিসেম্বরে তার মাথার ওপর থাকা এক কোটি ডলারের পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয় ওয়াশিংটন।

সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ট্রাম্প-শারা বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ দমন ও অরাজনৈতিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব কমানোসহ আইএস-বিরোধী কার্যক্রমে যৌথ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।