চীনে সমুদ্রের মাঝখানে ভাসমান মাছের খামার বাস্তবায়িত হয়েছে, যা এখন ভবিষ্যতের খাদ্য উৎপাদনের নতুন দিক দেখাচ্ছে। এই অভিনব ধারণার নাম Ship-Based Aquaculture বা জাহাজভিত্তিক মাছ চাষ, যা Deep-Sea Cage Aquaculture (DSCA) প্রযুক্তির একটি অংশ।

চীনের উদ্ভাবনের অন্যতম প্রতীক হলো বিশালাকার জাহাজ গুওক্সিন ১, দৈর্ঘ্যে ২৪৫ মিটার এবং প্রস্থে ৪৫ মিটার। প্রথম দেখায় এটি একটি কার্গো জাহাজের মতো মনে হলেও, আসলে এটি সমুদ্রের ভাসমান ফিশ ফার্ম। জাহাজের ভিতরে আছে একাধিক মাছ চাষ ইউনিট এবং স্বয়ংক্রিয় জল ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা। সমুদ্রের পানি প্রবেশ ও নির্গত হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে, ফলে ট্যাঙ্কে সবসময় থাকে তাজা ও অক্সিজেনসমৃদ্ধ জল।

এই প্রকল্পের মূল চালিকাশক্তি হলো উন্নত প্রযুক্তি। প্রতিটি ইউনিটে বসানো রয়েছে সেন্সর ও ক্যামেরা, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) মাধ্যমে পানি, তাপমাত্রা, অক্সিজেন ও খাদ্যের ভারসাম্য পর্যবেক্ষণ করে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠিক করে দেয় কখন খাবার দিতে হবে, কখন পানি পরিবর্তন করতে হবে এবং কোথায় সমস্যা আছে কিনা। এক ধরনের স্বয়ংক্রিয় ফিশ ফ্যাক্টরির মতো, যেখানে মানুষের উপস্থিতি সীমিত হলেও নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি প্রযুক্তির হাতে।

জাহাজভিত্তিক মাছ চাষের একটি বড় সুবিধা হলো স্থান পরিবর্তনের ক্ষমতা। ঝড়, তাপমাত্রার ওঠানামা বা পানির মান খারাপ হলে, জাহাজগুলো নিরাপদ স্থানে সরানো যায়। ফলে চাষ হয় নিরাপদ এবং ক্ষয়ক্ষতি কম হয়।

চীন আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বায়ু শক্তি ও মাছ চাষকে একত্রিত করেছে। জাহাজের উপরের অংশে বিশাল উইন্ড টারবাইন ঘোরে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, আর নিচে চলছে মাছ চাষ। এই সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম বিশ্বে এক নতুন উদাহরণ।

বর্তমানে চীন DSCA প্রযুক্তি থেকে বছরে এক মিলিয়নেরও বেশি টন মাছ উৎপাদন করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, গভীর সমুদ্রের প্রবল ঢেউ, স্রোত ও ঝড় এই জাহাজগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। পরিবেশবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যেন এই প্রক্রিয়ায় সমুদ্র দূষণ বৃদ্ধি না পায়।