ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র তুলে সাংবাদিকতার ‘নোবেল’ পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছেন ফিলিস্তিনি লেখক, কবি ও সাহিত্যিক মোসাব আবু তোহা। মতামত বিভাগে এ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এদিকে ইসরায়েলপন্থীরা তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার দাবি তুলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী দ্য নিউইয়র্কার-এ প্রকাশিত একাধিক প্রবন্ধের জন্য আবু তোহা সাংবাদিকতার ‘নোবেল’ নামে খ্যাত সম্মানজনক এ পুরস্কার পেয়েছেন। গতকাল সোমবার পুলিৎজার বিজয়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হয়।

আবু তোহা তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের চালানো শারীরিক ও মানসিক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁর প্রবন্ধগুলো গভীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হলেও ব্যক্তিগত স্মৃতিকথার মিশেলে সেগুলো উপস্থাপন করেছেন তিনি, যা ফিলিস্তিনি জনগণের যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা জীবন্ত করে তুলেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবু তোহা লিখেছেন, ‘কমেন্টারির জন্য আমি এইমাত্র পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছি। এটি আশার বার্তা হয়ে উঠুক। এটি একটি গল্প হোক।’

আবু তোহা সম্ভবত আরেক ফিলিস্তিনি কবি রেফাত আলআরির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ কথা বলেছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজায় ইসরায়েলের এক হামলায় আলআরি নিহত হন। আলআরির লেখা শেষ কবিতার শিরোনাম ছিল ‘যদি আমাকে মরতেই হয়, তবে এটি একটি গল্প হোক’।

২০২৩ সালে গাজায় আবু তোহাকে আটক করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। পরে তাঁকে ছেড়ে মিসরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আবু তোহা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

নিউইয়র্কারে এক প্রবন্ধে আবু তোহা লিখেছেন, ‘গত এক বছরে আমি আমার স্মৃতির অনেক অংশ হারিয়েছি, যা স্পর্শ করা যেত—মানুষ, স্থান আর বস্তু; যেগুলো আমাকে অতীতকে মনে রাখতে সহায়তা করত। ভালো স্মৃতি তৈরির জন্য আমাকে লড়াই করতে হয়। গাজায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া প্রতিটি বাড়ি যেন এক একটি অ্যালবাম, যার পাতাগুলো ছবি দিয়ে নয়; বরং সত্যিকার মানুষ-মৃতদেহ দিয়ে ভরা।’

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী কয়েকটি দল আবু তোহাকে সে দেশ থেকে বিতাড়িত করার দাবি তুলেছে। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা থেকে গত কয়েক মাসে তোহা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি অনুষ্ঠানও বাতিল করেছেন।

গত ডিসেম্বরে আল–জাজিরার পডকাস্টে আবু তোহা বলেছিলেন, গাজায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে না পারার অনুভূতি ধ্বংসাত্মক। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘কল্পনা করুন, একসময় আপনি আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন ও সন্তানদের সঙ্গে গাজার একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। আপনি কাউকে রক্ষা করতে পারছেন না। তাঁদের কোনো খাবার, পানি কিংবা ওষুধ দিতে পারছেন না। অথচ এখন আপনি যুক্তরাষ্ট্রে, সেই দেশে আছেন যে দেশ এই গণহত্যার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এটি খুবই হৃদয়বিদারক।’

আবু তোহা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী মাদক ফেন্টানিলের সহজলভ্যতা নিয়ে নির্ভীক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ বছর (২০২৫ সাল) পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে।

ব্রেকিং নিউজের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। নিউইয়র্ক টাইমস এবার চারটি শাখায় পুলিৎজার জিতেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পর্যায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ পুরস্কার সাংবাদিকতার ‘নোবেল’ হিসেবে খ্যাত। ১৯১৭ সাল থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকতা ছাড়াও সাহিত্য, সংগীত ও নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য এ পুরস্কার দেওয়া হয়। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একটি বোর্ড প্রতিবছর এ পুরস্কার ঘোষণা করে।#