সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধ, রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও নিরাপত্তাহীনতা এখন আর দেশীয় বিষয় নয়—তা আঞ্চলিক সংকটে রূপ নিয়েছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন এবং আহমেদ আল-শারা-র অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উত্থান একা একা ঘটেনি, বরং ৭ অক্টোবর গাজায় শুরু হওয়া একটি বৃহত্তর সংঘাতের প্রেক্ষাপটেই তা ঘটেছে।

এই সংঘাতের ফলে ইরাক এখন এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে—বিশেষ করে এর ভৌগলিক অবস্থান ও প্রতিবেশী দেশের ঘটনাবলির সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সংযুক্ত থাকার কারণে। দেশটিতে বর্তমানে একের পর এক হত্যাকাণ্ড, সামরিক উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ লক্ষ করা যাচ্ছে।

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সরকার-সমর্থিত বাহিনী ও দ্রুজ যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল স্পষ্টভাবে দ্রুজদের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছে এবং সীমান্ত এলাকায় ‘নিরস্ত্র বাফার জোন’ তৈরির কথা বলছে।

সুইদা প্রদেশে চলমান সংঘর্ষ ইতোমধ্যে সিরিয়ার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন আরও গভীর করেছে। দামেস্ক ও দেরা-র মতো শহরে অনেক ব্যবসায়ী ইতোমধ্যেই সুইদার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ডাক দিয়েছেন।

সংঘাতের রাজনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তাজনিত প্রভাব লেবানন ও ইরাকে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে লেবানন ও ইরাকের উপজাতীয় যোদ্ধাদের সিরিয়ায় লড়াইয়ে অংশগ্রহণের প্রমাণ মিলেছে। এমনকি সৌদি আরব থেকেও উপজাতীয় যোদ্ধাদের অংশগ্রহণের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

লেবাননে সাম্প্রতিক এক ফুটবল ম্যাচে দাঙ্গার আশঙ্কায় দর্শক প্রবেশ নিষিদ্ধ করে খেলা পরিচালনা করতে হয়েছে। অন্যদিকে ইরাকে বিতর্ক চলছে—দেশটি কীভাবে আঞ্চলিক সংকটে সাড়া দেবে এবং দেশীয় স্বার্থ রক্ষায় কি ইরান-ঘনিষ্ঠ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্র করা উচিত?

ইরাকের শক্তিশালী শিয়া গোষ্ঠী আসা’ইব আহল আল-হাক-এর রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য শেখ সালাম আল-জাজাইরি সতর্ক করে বলেন, সিরিয়াকে পাঁচটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে ভাগ করার পরিকল্পনা ইরাক কখনোই মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, ইসরায়েল সিরিয়ায় যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, তার সরাসরি প্রভাব ইরাকে পড়বে। তারা দুর্বল আরব রাষ্ট্র তৈরি করে নিজেদের সম্প্রসারণবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। একই সঙ্গে তিনি ইরাকি সেনাবাহিনীর আধুনিক অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে ইরাকি রাজনীতিক মিথাল আল-আলুসি মনে করেন, ইরানপন্থী মিলিশিয়ারা এবং ইসরায়েলের লক্ষ্য অভিন্ন—সিরিয়ার সরকার পতন।

তিনি বলেন, এই মিলিশিয়ারা আসলে ইরানের হাতিয়ার। ইরাক হয়ে উঠেছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বের যুদ্ধক্ষেত্র।

তিনি আরও বলেন, সিরিয়ায় দ্রুজদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে মিলিশিয়ারা ইসরায়েলের স্ট্রাইককে বৈধতা দিচ্ছে। আবার নিজেরাই সিরিয়ার সরকারকে সুন্নি সম্প্রদায়বিরোধী বলে অভিযুক্ত করছে। তাঁর মতে, এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্র করাই হবে প্রকৃত ইরাকি রাষ্ট্র গঠনের প্রথম ধাপ।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই অস্ত্রধারীরা কখনো গণতন্ত্র চায় না। তারা জানে, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ইরাক গড়ে উঠলে তাদের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে।

সূত্র: শাফাক নিউজ