ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছেই। তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা। দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের মিছিল। একদিকে আকাশ ও স্থল অভিযান, অন্যদিকে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ; গাজা যেন সাক্ষাৎ নরক হয়ে উঠেছে তার বাসিন্দাদের জন্য।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত ভূখণ্ডটিতে রাতভর হামলা চালিয়ে আরও ৮১ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে করে, গত প্রায় ১৮ মাসে গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতার শিকার হয়ে প্রায় ৫৩ হাজার নিরপরাধ ফিলিস্তিনি তাদের প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
বুধবার (১৪ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক হামলায় মধ্যরাতের পর থেকে কমপক্ষে ৫১ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। আর দক্ষিণ গাজায় হাসপাতালে চালানো হামলায় আরও ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। মূলত, হাসপাতালে হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই উত্তর গাজায় ওই হামলা চালায় ইসরায়েল।
আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা তীব্রতর করেছে এবং মধ্যরাত থেকে কমপক্ষে ৫১ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে উত্তর গাজার চিকিৎসকরা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। দক্ষিণ গাজার ইউরোপীয় এবং নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনী বোমা হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৩০ জনকে হত্যা করার কয়েক ঘণ্টা পরেই উত্তর গাজায় হামলাগুলো শুরু হয়। হাসপাতালে হওয়া ওই হামলায় নিহত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসা নিতে আসা একজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার ৯৮৯ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন; সেইসঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১৯ হাজার ৭২১ জন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক হামলার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গাজায় ভয়াবহ এক অভিযানে নামে ইসরায়েলি বাহিনী। দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২ হাজার ৮৬১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৮ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর করার চেষ্টা করে যাচ্ছে মিশর এবং কাতার। তবে, ইসরায়েল ও হামাস কেউই নিজেদের মূল দাবি থেকে সরে আসেনি। কার্যকর চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থতার জন্য উভয় পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে।
গত সোমবার (১২ মে) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আলোচক দলকে কাতারে পাঠানো হয়েছে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে। তবে, পরদিন মঙ্গলবারই (১৩ মে) নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন, হামাসকে নির্মূল করা এবং আমাদের সব জিম্মিকে মুক্ত করা—এই দুই কাজ একসঙ্গে চলবে। হামাস যদি বলে আমরা আরও ১০ জন মুক্তি দিতে চাই, তাও আমরা যুদ্ধ বন্ধ করব না।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা গাজায় পূর্ণ শক্তি নিয়ে অভিযান চালাব। আমাদের সেনারা ইতোমধ্যে সেখানে মোতায়েন আছে।