গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি উপেক্ষা করে অব্যাহত রয়েছে ইসরাইলি বাহিনীর হামলা। দখলদার বাহিনীর এই আগ্রাসনে প্রতিদিনই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ১৬৯ জনে।
শনিবার (৮ নভেম্বর) এ তথ্য প্রকাশ করেছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
মন্ত্রণালয় জানায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গত এক মাসে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় আরও ২৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
শনিবারও গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত দুই ফিলিস্তিনির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ইসরাইলি সেনারা উত্তর গাজার সীমান্তে ‘ইয়েলো লাইন’ অতিক্রমের অভিযোগে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে।
বাসিন্দাদের দাবি, এই ‘ইয়েলো লাইন’ বা হলুদ সীমা আসলে এক অদৃশ্য সীমানা, যার কোনো স্পষ্ট চিহ্ন নেই। ফলে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ ফিলিস্তিনিরা। এ ছাড়া গাজার অন্যান্য এলাকাতেও চলছে বোমা ও গুলি হামলা। কিছু এলাকায় সেনাদের পুঁতে রাখা বিস্ফোরকের আঘাতে শিশুরাও নিহত হচ্ছে।
গাজার স্থানীয় প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইসরাইল প্রায় দুই লাখ টন বোমা নিক্ষেপ করেছে উপত্যকায়, যার মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার টন এখনো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, গাজার শেখ রাদওয়ান এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ দূষণ ও পানির সংকট। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পুকুরগুলো এখন ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। ইসরাইলি হামলায় পানি সরবরাহ পাম্প ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এই পানি ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের বসতি ও আশ্রয়কেন্দ্রে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ওই এলাকায় পানির স্তর বেড়ে ৬ মিটার পর্যন্ত উঠেছে, যা সংক্রমণ ও মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার ভূগর্ভস্থ পানির বেশিরভাগ উৎস এখন মারাত্মকভাবে দূষিত।
অন্যদিকে, পশ্চিম তীরেও বাড়ছে সহিংসতা। জেনিনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাবা গ্রামে ফিলিস্তিনিদের ঘরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা, যাদের সহায়তা করেছে ইসরাইলি সেনারা।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, শুধু সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিম তীরের ৭০টি গ্রামে ১২৬টি সহিংস হামলা সংঘটিত হয়েছে। এসব হামলায় পুড়ে গেছে চার হাজারেরও বেশি জলপাই গাছ এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু পরিবার।