প্রতি বছর আগস্টে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস আসে ইতিহাস এবং প্রতিশ্রুতির স্মরণ করিয়ে দিতে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ভারতীয় মুসলিমদের নাগরিক হিসেবে সমান সুযোগ-সুবিধা এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তখন প্রায় সাড়ে তিন কোটি মুসলিম ভারতেই থেকে যান।

আজ সেই জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি, যা পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যা। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৬০ সালের মধ্যে ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠী হবে বিশ্বের বৃহত্তম।

তবে, এই জনগোষ্ঠী এখনও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রান্তিকতার মুখোমুখি। মুসলিম লীগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় মুসলিমরা কোণঠাসা হতে পারে, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের শিকার হতে পারে—আজ সেই হুঁশিয়ারি বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।

২০১৯ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) প্রথমবার ধর্মভিত্তিক নাগরিকত্বের মানদণ্ড তৈরি করে। এরপর থেকে বিভিন্ন ঘটনায় ধর্মীয় বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কাশ্মির থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ ও বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অনেকে আটক বা পুশব্যাকের শিকার হচ্ছেন। এদের অধিকাংশ দরিদ্র এবং পর্যাপ্ত নথিপত্র না থাকা সত্ত্বেও নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও মুসলিমদের প্রান্তিককরণ দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ শনাক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মুসলিম জনগোষ্ঠী ভোটাধিকার, নিরাপত্তা এবং সাংস্কৃতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সমস্যার উদাহরণও রয়েছে। উর্দু ভাষার শিক্ষাকে ধীরে ধীরে হ্রাস করা হচ্ছে, সিনেমা এবং মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব প্রতিফলিত হচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনে শ্রমিক ও সাধারণ মানুষও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

অতীত থেকে শিক্ষা নিলে বোঝা যায়, রাষ্ট্রের নীতি এবং দৈনন্দিন বিদ্বেষের মিলনে মুসলিমদের অধিকার ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। এই প্রবণতা শুধুমাত্র সামাজিক নয়, বরং রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নাগরিকত্ব ও সাংস্কৃতিক অধিকার হারালে কেবল ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নয়, পুরো জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণও হুমকির মুখে পড়ে। ভারতের মুসলিমদের বর্তমান পরিস্থিতি তাই এক নীরব, কিন্তু স্পষ্ট সংকেত দেয়—নাগরিক অধিকার ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা রক্ষা করা আজ আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।