জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিকে ‘পাগলামি’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে তিনি গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ‘শেষ না হওয়া পর্যন্ত’ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। খবর– বিবিসি।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) তার বক্তৃতার শুরুতেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশসহ বহু দেশের প্রতিনিধি প্রতিবাদ স্বরূপ সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। হলের ভেতরে বিক্ষিপ্ত হাততালি ও হট্টগোলের মধ্যেই নেতানিয়াহু বক্তব্য শুরু করেন। ইসরাইলি মিশন দাবি করেছে, হাততালিগুলো মূলত আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছ থেকে এসেছে।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরের বাইরে ফিলিস্তিনপন্থি সংগঠনগুলো নেতানিয়াহুর আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। অন্যদিকে, হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের পরিবার তাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেয়।

৩০ মিনিটের বক্তৃতায় নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরাইলি বাহিনীর সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ওই হামলায় ১২০০ মানুষ নিহত ও প্রায় ২৫০ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ায় তিনি তীব্র সমালোচনা করেন এবং বলেন, এটি “ইহুদি ও নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসকে উসকে দেবে।” দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে তিনি সরাসরি ‘পাগলামি’ বলে আখ্যা দেন।

হামাসের হাতে আটক প্রায় ১০০ জিম্মির উদ্দেশে নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা তোমাদের ভুলিনি। ইসরাইলের জনগণ তোমাদের পাশে আছে।” তিনি আরও জানান, ইসরাইলি সেনারা গাজায় সীমান্তে লাউডস্পিকার ও মোবাইল হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে তার ভাষণ সম্প্রচার করছে, যাতে সেখানকার মানুষ তা শুনতে পারে।

বক্তৃতায় তিনি ইরানের বিরুদ্ধেও কড়া অবস্থান নেন এবং মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান। নেতানিয়াহু ইরান ও হামাসকে ‘ইসলামি দুষ্টতার অক্ষ’ বলে অভিহিত করেন এবং ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করার আহ্বান জানান।

এর আগে জাতিসংঘে ভিডিও বক্তৃতায় ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামাসকে ভবিষ্যৎ প্রশাসন থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানান এবং ইসরাইলি দখলদারিত্ব বন্ধের আহ্বান করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও গাজার পরিস্থিতিকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলে আখ্যা দেন।

এটি ছিল যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পর নেতানিয়াহুর প্রথম জাতিসংঘ ভাষণ। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল।