পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান জেলার বৃহত্তম শহর ওয়ানায় স্থানীয় শান্তি কমিটির দফতরে বৈঠক চলাকালীন শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঘটনাস্থলেই সাতজন নিহত হয়েছেন, ১৬ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে এই বোমা হামলা ঘটে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন।
এতে দফতরের বিশাল অংশ ধসে পড়ে ও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন অনেকে। খবর পেয়ে দ্রুত উদ্ধারকারী দল ও স্থানীয় লোকজন উদ্ধারকাজ শুরু করে। নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু আলামতও জব্দ করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত হামলার দায় স্বীকার করেনি।
ওয়ানা সিটি পুলিশের স্টেশন হাউস অফিসার উসমান নাজির পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনকে বলেন, সোমবার সকাল ১১টার দিকে এই বিস্ফোরণে সাতজন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছেন।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিস্ফোরণের সময় শান্তি কমিটির অফিস লক্ষ্যবস্তু ছিল, কারণ সেখানে একটি সভা চলছিল।’
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশটি মূলত পাকিস্তানের নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠন তেহরিক-ই তালেবানের (টিটিপি) ঘাঁটি। পাকিস্তানের অনেকগুলো সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী মিলে টিটিপি গঠন করেছে। তারা সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের সরকারকে উচ্ছেদ করে দেশটিতে কঠোর শরিয়াহ শাসন কায়েম করতে চায়। টিটিপি আফগানিস্তানের তালেবান আন্দোলনের অংশ নয়। কিন্তু আফগান তালেবানের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার আছে তাদের।
২০২১ সালে অস্ত্রবিরতি চুক্তি করেছিল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু ২০২২ সালের নভেম্বরে এই চুক্তি ভেঙে যায়। তারপর থেকে সন্ত্রাসী হামলার হার বাড়িয়ে দেয় টিটিপি। বিশেষ করে ২০২৪ সালের বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানে ৪৪টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার অধিকাংশই ঘটিয়েছে এই গোষ্ঠীটি। এসব হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৮৫ জন সেনা ও ৯২৭ জন বেসামরিক মানুষ। বিপরীতে গত বছর সেনা-পুলিশ যৌথ অভিযানে নিহত হয়েছে ৯৩৪ জন সন্ত্রাসী।
সর্বশেষ সোমবার (২১ এপ্রিল) পাঞ্জাব ও খাইবার-পাখতুনখাওয়া প্রদেশে পুলিশ, কাউন্টার-টেরোরিজম ডিপার্টমেন্ট (সিটিডি) ও নিরাপত্তা বাহিনীর পৃথক অভিযানে টিটিপির অন্তত ১৬ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।