আফগানিস্তানের তালেবান সরকার নিশ্চিত করেছে যে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকার বেশ কয়েকটি জায়গায় তারা হামলা চালিয়েছে। তালেবানের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই 'প্রতিশোধমূলক' হামলায় ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনাসদস্য নিহত হয়েছে।

এর আগে, পাকিস্তান গত বৃহস্পতিবার আফগান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, তাদের সীমান্তের ভেতরে একটি বাজারে বোমা হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে তালেবান সরকার।

পরে নিজেদের হামলাকে তারা ' প্রতিশোধমূলক অভিযান ' বলে অভিহিত করে।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেছেন, আফগান হামলাগুলো 'বিনা উস্কানিতে' করা হয়েছিল এবং বেসামরিক নাগরিকদের উপর গুলি চালানো হয়েছিল।

মি. নাকভী সতর্ক করেছিলেন যে, তার দেশের বাহিনী 'প্রতিটি ইটের বিনিময়ে একটি পাথর' দিয়ে পাল্টা জবাব দেবে।

ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, কাবুল তার মাটিতে পাকিস্তানকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। যদিও এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে তালেবান সরকার।

আফগান ও পাকিস্তান উভয় পক্ষই কুনার-কুররাম অঞ্চলে ছোট অস্ত্র ও কামান ব্যবহার করেছে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে।

তালেবানদের হামলার 'তীব্র নিন্দা' জানিয়ে মি. নাকভি বলেন, " বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর আফগান বাহিনীর গুলিবর্ষণ আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।"

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ এক পোস্টে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মি. নাকভি বলেছেন, "আফগানিস্তান আগুন ও রক্তের খেলা খেলছে।"

পাকিস্তানের মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের একজন সামরিক মুখপাত্র।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।

তবে সেখানকার একটি নিরাপত্তা সূত্র বিবিসির কাছে দাবি করেছে, পাকিস্তান - আফগানিস্তান সীমান্তের বেশ কয়েকটি স্থানে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে আঙ্গুর আড্ডা, বাজাউর, কুররাম, দির, চিত্রল এবং বারামচা।

কুররাম জেলার জিরো পয়েন্টে কর্মরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় রাত বারোটা নাগাদ আফগানিস্তানের দিক থেকে ভারী অস্ত্রের মাধ্যমে গুলিবর্ষণ শুরু হয়।

সীমান্তের একাধিক স্থান থেকে ব্যাপক গোলাগুলির খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।

গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আফগানিস্তানের একটি শহরে দুটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাওয়ার পর দেশটির তালেবান সরকার পাকিস্তানকে কাবুলের ' সার্বভৌম ভূখণ্ড ' লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।

শুক্রবার তালেবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আফগানিস্তানের দক্ষিণ - পূর্ব সীমান্তবর্তী পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তান একটি বেসামরিক বাজারে বোমা হামলা চালিয়েছে।

সেখানকার স্থানীয় মানুষ বিবিসির আফগান সার্ভিসকে জানিয়েছে, এতে বেশ কয়েকটি দোকান ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

আফগানিস্তানকে 'পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটি ' হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে একজন শীর্ষ পাকিস্তানি জেনারেল অভিযোগ করেছেন।

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে আফগান তালেবানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে যে, তারা টিটিপি নামে পরিচিত পাকিস্তান তালেবানকে তাদের ভূমি থেকে কাজ করার এবং ইসলামাবাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুমতি দিয়েছে। যাতে তারা কঠোর ইসলামী নেতৃত্বাধীন শাসন ব্যবস্থা কার্যকর করতে পারে। আফগান তালেবান সরকার সবসময়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

সাম্প্রতিক এই শ্বাসরূদ্ধকর পরিস্থিতির সাথে আফগান তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সপ্তাহব্যাপী ভারত সফরের সাথে মিলে যায়।

দিল্লি জানিয়েছে, তারা কাবুলে আবার দূতাবাস চালু করবে। যেটি চার বছর আগে তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

মি. নাকভী সতর্ক করে বলেছেন, "ভারতের মতো আফগানিস্তানকেও উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। যাতে তারা পাকিস্তানের দিকে বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে সাহস না করে।"

গত মাসে পাকিস্তানের সাথে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরকারী সৌদি আরব এক বিবৃতিতে, আত্মসংযম এবং ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে উত্তেজনা যাতে না বাড়ে সে আহ্বান জানিয়েছে।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কাতার।

একইসাথে, উভয় পক্ষকেই 'সংলাপ, কূটনীতি এবং সংযমকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ' আহ্বান জানিয়েছে কাতার।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসীদের তালিকায় রয়েছেন মি. মুত্তাকি। তাই ভারত সফরের জন্য তার বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন ছিল।

এই প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কমিটি আমির খান মুত্তাকিকে এই সফরের অনুমতি দিয়েছে।

আফগানিস্তানে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর আমির খান মুত্তাকির প্রথম ভারত সফর ছিল এটি।