ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলমানদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ‘বুলডোজার’ এখন হয়ে উঠেছে নিপীড়নের প্রতীক। উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, আসামসহ একাধিক রাজ্যে সরকারি অভিযানের নামে এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, অনেক সময়ই কোনো আদালতের নির্দেশ বা আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই।
বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ২০১৭ সালে ক্ষমতায় এসে বুলডোজারকে ‘সুশাসনের প্রতীক’ হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন। ধীরে ধীরে তা মুসলিমদের ওপর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নিপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়।
গত সেপ্টেম্বরেই কানপুরে ঈদে মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রায় ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা একটি ব্যানার নিয়ে অংশ নেওয়ায় শতাধিক মুসলমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরবর্তী সময়ে অনেকের বাড়ি ভাঙা হয়, যেগুলোর অধিকাংশই মুসলমানদের মালিকানাধীন।
সুমাইয়া ফাতেমা নামে এক ভুক্তভোগী তুর্কি গণমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, শুধু মুসলমান বলেই আমাদের টার্গেট করা হচ্ছে।
২০২২ সালের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে অন্তত পাঁচ রাজ্যে ১২৮টি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, অধিকাংশই মুসলমানদের। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ ধ্বংসযজ্ঞকে ‘বৈষম্যমূলক ও বেআইনি’ বলে মন্তব্য করেছে।
আইনজীবী কেকে রাই বলেন, বিজেপির আদর্শিক লক্ষ্যই হলো মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে রাখা হচ্ছে।
হাউজিং অ্যান্ড ল্যান্ড রাইটস নেটওয়ার্কের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারতে অন্তত ১ লাখ ৫৩ হাজার বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন সাত লাখের বেশি মানুষ, যাদের বড় অংশ মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলের।
সমালোচকদের মতে, এই নীতির পেছনে রয়েছে আরএসএস-এর প্রভাব, হিন্দু জাতীয়তাবাদী এই সংগঠনই বিজেপির আদর্শিক ভিত্তি। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতায় আসার পর থেকে নাগরিকত্ব আইন, নামাজের জায়গা সীমিতকরণ এবং বিক্ষোভ দমনসহ একাধিক পদক্ষেপ মুসলমানদের কোণঠাসা করার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বুলডোজার নীতিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বলেছে, কোনো নাগরিককে আদালতের রায় ছাড়া শাস্তি দেওয়া যায় না। স্থাপনা ভাঙার ক্ষেত্রেও প্রশাসনকে আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে। তবু অনেক জায়গায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই নির্দেশনা অমান্য করছে, আর বুলডোজার চলছে নাগরিকদের ঘরবাড়ির ওপর।
সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড