দক্ষিণ ফিলিপাইনের উপকূলে শুক্রবার সকালে ৭.৪ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সুনামির আশঙ্কায় হাজারো মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া উভয় দেশই সুনামি সতর্কতা জারি করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ফিলিপাইনের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্ডানাও দ্বীপের উপকূলবর্তী এলাকায়। কম্পনের ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয় এবং বিভিন্ন স্থানে ভবনের ক্ষয়ক্ষতি ঘটে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ ফিলিপাইনের উপকূলীয় শহরগুলোর বাসিন্দাদের এক মিটারেরও বেশি উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
দাভাও শহরের হাসপাতাল এলাকায় রোগীদের বাইরে পার্কিং লটে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, কম্পনের সময় রাস্তায় গাড়ি থেমে যায়, ভবনের তারগুলো দুলতে থাকে এবং মানুষ আতঙ্কে বাইরে ছুটে আসে।
দাভাও ওরিয়েন্টাল প্রদেশের গভর্নর এডউইন জুবাহিব স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডিজেডএমএম-কে বলেছেন, ভূমিকম্পটি অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। কিছু ভবনের ক্ষতির খবর পেয়েছি।
মানায় শহরের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা রিচি ডিউইয়েন বলেন, অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। আমি নিজেও মাথা ঘোরা ও আতঙ্ক অনুভব করছি। এত শক্তিশালী ভূমিকম্প জীবনে প্রথমবার অনুভব করলাম।
ভূমিকম্পপ্রবণ প্রশান্ত মহাসাগরের রিং অব ফায়ার অঞ্চলে অবস্থান করায় ফিলিপাইন প্রায়ই ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়। দেশটির আগ্নেয়গিরি ও ভূকম্পন সংস্থা ফিভলক্সের পরিচালক তেরেসিতো বাকলকোল বলেন, এটাই আমাদের বাস্তবতা। আমরা প্রায়ই ভূমিকম্প, সুনামি বা অগ্ন্যুৎপাতের মুখোমুখি হব। ভয় না পেয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।
মাত্র এক সপ্তাহ আগেই, ৪ অক্টোবর, মধ্য ফিলিপাইনের সেবু প্রদেশে ৬.৯ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্পে অন্তত ৭৪ জন নিহত হন এবং শতাধিক আহত হন। ওই ঘটনায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। এর আগের মাসে দেশটির উত্তরাঞ্চলে আঘাত হানে এক ভয়াবহ সুপার টাইফুন, যাতে ১১ জন প্রাণ হারান।
ভূমিকম্পের পর ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ ‘ধ্বংসাত্মক ও প্রাণঘাতী’ সুনামির আশঙ্কা জানালেও এক ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র জানায়, প্রধান হুমকি কেটে গেছে। তবে মিন্ডানাও অঞ্চলে ২.৬ থেকে ৪.৯ মাত্রার কয়েকটি আফটারশক অনুভূত হয়েছে বলে জানায় ফিভলক্স।
অন্যদিকে, নিকটবর্তী ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুলাওয়েসি প্রদেশের তালাউদ দ্বীপপুঞ্জে ছোট সুনামি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, যেখানে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১৭ সেন্টিমিটার। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ছুটি দিয়েছে, তবে পরিস্থিতি আপাতত স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে।
ইন্দোনেশীয় দুর্যোগ সংস্থা নাগরিকদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছে, শান্ত থাকুন এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের কাছ থেকে দূরে থাকুন।