সুদানের উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশের শহরে ভয়াবহ সহিংসতার পর রাস্তায় পড়ে আছে অসংখ্য লাশ। কবর দেওয়ার মতো মানুষও নেই সেখানে। গত সপ্তাহে আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) শহরটি দখল করার সময় অন্তত ১,৫০০ মানুষকে হত্যা করে বলে জানা গেছে। শুধু একটি হাসপাতালেই প্রাণ হারায় প্রায় ৪৬০ জন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, শহরটিতে সাধারণ মানুষ চরম বিপদের মধ্যে রয়েছে। আহতরা চিকিৎসা না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। এলাকা ছেড়ে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ ৭০ কিলোমিটার দূরের তাভিলা শহরে আশ্রয় নিয়েছে—যেখানে আগে থেকেই ৬ লাখ ৫০ হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছে।
স্থানীয় এক নারী হায়াত জানান, সাতজন আরএসএফ সদস্য তার বাড়িতে ঢুকে লুটপাট চালায় এবং তার ১৬ বছর বয়সী ছেলেকে হত্যা করে। তিনি বলেন, “রাস্তায় অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে আছে, কাউকে কবর দেওয়ারও সুযোগ নেই।”
অন্যদিকে, এক বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি হুসেইন বলেন, “এল-ফাশের এখন এক মৃত্যুপুরী। লাশে ভরে গেছে রাস্তাগুলো, কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারছে না।”
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল জানিয়েছে, তাভিলার পথে অনেক শরণার্থী নিখোঁজ হয়েছেন—তাদের কেউ কেউ হয়তো পথেই প্রাণ হারিয়েছেন।
জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানিয়েছেন, দারফুরে মানবিক ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে সেন্ট্রাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফান্ড থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “৪৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন—এ ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
সুদান বিশেষজ্ঞ শায়না লুইস বলেন, “দারফুরের এই হত্যাযজ্ঞ আমাদের বারবার দেওয়া সতর্কবার্তারই পরিণতি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদাসীনতা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে।”
তিনি আরও জানান, স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে বিশাল এলাকা জুড়ে রক্তে ভেজা মাটি ও মৃতদেহের ছায়া—যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরছে।
বর্তমানে এল-ফাশের শহরে খাদ্য, পানি ও ওষুধের মারাত্মক সংকট, এবং মানবিক সংস্থাগুলো এটিকে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করেছে।
সূত্র : আল জাজিরা