মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার আগুন ছড়িয়েছে। গাজার মতো এবার ইরানেও নির্বিচার হামলা চালিয়েছে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল। রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে চালানো এসব হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৪০ জন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।

ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাবে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরান। তেল আবিব ও হাইফায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণে অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছেন এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন ধরে যাওয়ায় বহু এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পার্লামেন্টে দেয়া বক্তব্যে বলেন, "শত্রুরা সন্ত্রাস ও হত্যা চালিয়ে আমাদের দমন করতে পারবে না। শত শত বীর ইরানিরা এই পতাকা বহন করে যাবে। আমরা পারমাণবিক অস্ত্র চাই না, তবে শান্তিপূর্ণ শক্তি উৎপাদনের অধিকার আমাদের আছে।"

ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের গোয়েন্দা প্রধানসহ আরও দুই জেনারেল। হামলায় মোট ১৪৮১ জন নিহত বা আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে তেহরানের চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ইরানের খাতাম আল-আম্বিয়া বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, তারা মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে ইসরাইলের ১০টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তারা আরও জানায়, আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে তেল আবিবের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তরে হামলা চালানো হয়।

এ প্রসঙ্গে ইসরাইলি নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। দেশটির অত্যাধুনিক ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাচ্ছেন অনেকেই। যদিও ইসরাইল দাবি করছে, তাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনও কার্যকর রয়েছে।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া ও তুরস্ক। প্রেসিডেন্ট এরদোগান ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপে এই সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে পাকিস্তান সরাসরি ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইরানি জেনারেল মহসিন রেজাই দাবি করেছেন, "পাকিস্তান জানিয়ে দিয়েছে, যদি ইসরাইল পারমাণবিক হামলা চালায়, তারা পাল্টা জবাবে ইসরাইলের ওপর পারমাণবিক হামলা করবে।"

ইসরাইলের হামলায় তেল আবিবে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে দূতাবাস কম্পিত হয়, তবে কোনো আমেরিকান কর্মকর্তা আহত হননি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান সংঘাত যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বকেই অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

সূত্র : তেহরান টাইমস, রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা।