পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে চরম অবনতি ঘটেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই বাড়ছে উত্তেজনা। সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে নিয়মিত চলছে মহড়া। কাশ্মীর সীমান্ত থেকে প্রতিদিনই আসছে দুদেশের সেনাদের সংঘাতের খবর। 

শনিবার (৩ মে) রাতেও ভয়াবহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) বিভিন্ন সেক্টরে। এর আগে টানা ১০ রাত দুই দেশের সেনাদের মধ্যে এমন সংঘাতের ঘটনা ঘটলেও, গতরাতের ঘটনাটিকে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ বলে দাবি করা হচ্ছে।     

রোববার (৪ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুলা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধর, নৌশেরা, সুন্দরবানি এবং আখনুর সেক্টর জুড়ে রাতভর এই গোলাগুলি হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি সূত্র। 

তাদের দাবি, পাকিস্তানি সেনারা বিনা উসকানিতে এসব হামলা চালিয়েছে। জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীও পাল্টা গুলি চালিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ বলে দাবি করা হচ্ছে এটিকে, যেখানে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানি পোস্ট অংশ নিয়েছে।  অবশ্য এখনও পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি এ গোলাগুলিতে। 

এনডিটিভি বলছে, সংঘাতের কয়েক ঘণ্টা আগে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য রাজস্থানের আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে এক পাকিস্তানি রেঞ্জারকে আটক করেছিল বিএসএফ। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়ই মূলত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানি সেনারা। 

এর আগে, চলমান উত্তেজনার মধ্যে গত ২৩ এপ্রিল পূর্ণম কুমার সাহু নামে এক বিএসএফ কনস্টেবলকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি রেঞ্জার্স।  পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সেক্টরে কৃষকদের পাহারা দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন সাহু।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তে ভুল করে পার হওয়া সৈন্যদের ফেরত দেওয়ার একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া আছে।  কিন্তু, সম্প্রতি দুদেশের সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় সাহুকে ফেরত দিচ্ছে না পাকিস্তান।  সাহুর মুক্তির জন্য একাধিক বৈঠক হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সময়সীমা বা অবস্থান স্পষ্ট করেনি পাকিস্তান।

ফলে, আটক পাকিস্তানি রেঞ্জারের ফেরতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি ভারতও।  এছাড়া, আটক হওয়া পাকিস্তানি রেঞ্জারের পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়নি এখন পর্যন্ত।  বর্তমানে বিএসএফের রাজস্থান ফ্রন্টিয়ারের হেফাজতে আছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।

এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। এরইমধ্যে বেশ কয়েক দফায় কাশ্মীরের সীমান্ত রেখায় (এলওসি) গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে। সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে মহড়া তো চলছেই, ইসলামাবাদকে সতর্কবার্তা দিতে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত।

প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গতকাল শনিবার পাকিস্তানও ‘আবদালি’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে। ৪৫০ কিমি রেঞ্জের এই ক্ষেপণাস্ত্র ‘সিন্ধু মহড়ার’ অংশ হিসেবে পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।