ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ওয়ার’-এর ওয়েবসাইট দেশটিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন আর ভারতীয় ব্যবহারকারীরা এই প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে পারছেন না। যা নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ভারতের ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০০-এর অধীনে ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই এই ওয়েবসাইটটিকে ‘ব্লক’ করা হয়েছে। তবে, ঠিক কোন কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
এই আকস্মিক ওয়েবসাইট বন্ধে হতবাক ‘দ্য ওয়ার’ কর্তৃপক্ষ। এক বিবৃতিতে তারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তারা। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই ধরনের সেন্সরশিপ সংবিধান কর্তৃক নিশ্চিত করা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সরাসরি লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এটি এমন এক সময়ে ঘটলো যখন সত্যভিত্তিক, বিবেকবান এবং যুক্তিনির্ভর সংবাদপত্র ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় সম্পদ হয়ে উঠেছে। এই মন্তব্য যেন বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় গণমাধ্যমের গুরুত্ব এবং চ্যালেঞ্জ উভয়কেই তুলে ধরে।
‘দ্য ওয়ার’ কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা জানিয়েছে, এই ‘অযৌক্তিক ও স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপের’ বিরুদ্ধে তারা আইনি পথে চ্যালেঞ্জ জানাবে। তাদের এই দৃঢ় পদক্ষেপ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
সংবাদমাধ্যমটি তাদের দীর্ঘদিনের পথচলার কথা স্মরণ করে পাঠকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। তারা বলেছে, গত ১০ বছর ধরে আমাদের কাজ পাঠকদের সমর্থনেই এগিয়েছে। এই সময়েও আমরা আশাবাদী, পাঠকরা আমাদের পাশে থাকবেন। এই কঠিন পরিস্থিতিতেও তারা সত্যনিষ্ঠ ও সঠিক সংবাদ পরিবেশনে পিছপা না হওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে, ঠিক সেই সময়েই এই নিউজ পোর্টালটি বন্ধ করে দেওয়া হলো। এর আগে, ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেল ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিল। ‘দ্য ওয়ার’ বন্ধের ঘটনা সেই ধারাবাহিকতারই অংশ কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
‘দ্য ওয়ার’ একটি পরিচিত এবং সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির সংবাদমাধ্যম হিসেবে পরিচিত। সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তের সমালোচনা করতে তারা দ্বিধা করত না, এমনটাই অভিমত অনেক মহলের। ওয়েবসাইট বন্ধের এই ঘটনাকে তাই ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন অনেকেই। প্রশ্ন উঠছে, সরকারের সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্যই কি এই পদক্ষেপ?