পেরুর লিমার কাছে এক প্রাচীন সমাধিতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সংরক্ষিত একটি মমি আবিষ্কৃত হয়েছে, যা দেখেই গবেষকরা হতবাক। মমিটির দুই হাত মুখের উপর রাখা, যা এক রহস্যময় ইঙ্গিত বহন করছে।

অনুমান করা হচ্ছে, এটি প্রায় ৮০০ থেকে ১,২০০ বছরের পুরনো এবং কোস্টাল প্রি-ইনকা সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত-সম্ভবত লিমা বা ইচমা জাতির।

সমাধি কক্ষে মাটির স্তরের নিচে এই মমির পাশাপাশি পাত্র, দড়ি এবং অন্যান্য জৈবিক অবশিষ্ট পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত মেলে যে, এই ব্যক্তি সম্ভবত সমাজে বা আচার-অনুষ্ঠানে বিশেষ মর্যাদা রাখতেন।

মমিটিকে অন্য মমিগুলোর থেকে আলাদা করে এর ভঙ্গি। মুখের উপর হাত রাখা এই অবস্থান পেরুভিয়ান প্রত্নতত্ত্বে বিরল।

প্রকল্পের প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক ড. মারিয়া কাস্তিল্লো বলেন, এ ধরনের ভঙ্গি দুর্ঘটনাবশত করা হয়নি। এটি সম্ভবত মৃত্যুর পর জীবন ও আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের সঙ্গে গভীর প্রতীকী অর্থ বহন করত।

গবেষকরা তর্ক করছেন-এটি কি শ্রদ্ধা প্রদর্শন? সুরক্ষার অনুরোধ? নাকি মৃত্যুর পর নীরবতার শপথ?

প্রি-ইনকা উপকূলীয় সমাজে মরদেহকে রেশমে মুড়ে এবং খাবার বা অন্যান্য উপহার দিয়ে সমাধিতে রাখা হত। সমাধিতে পাওয়া দড়িগুলো ইঙ্গিত দেয় যে রীতি অনুযায়ী বেঁধে রাখা হত, আর মাটির পাত্রগুলো সম্ভবত মৃত ব্যক্তির যাত্রার সঙ্গে খাবার বা পানীয় রাখতে ব্যবহৃত হতো।

ড. কাস্তিল্লো আরও বলেন, এই আবিষ্কার প্রাচীন পেরুর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বোঝার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি নতুন আবিষ্কার আমাদের জানায় তারা জীবন, মৃত্যু ও চিরন্তনতা কেমনভাবে দেখত।

গবেষকরা বলছেন, এটি শুধু একটি মজার আবিষ্কার নয়-বরং প্রাচীন সমাজের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক জীবন সম্পর্কে জানার একটি দারুণ সুযোগ। মমির সংরক্ষণে তারা শুধু সমাধি আচার নয়, স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কেও গবেষণা করতে পারবেন।

মমির ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষ ও গবেষক উভয়েই কৌতূহল ও অনুমান করছেন। কেউ মনে করছেন, এটি শোকের প্রতীক, কেউ দেখছেন আধ্যাত্মিক শ্রদ্ধার ইঙ্গিত, আবার কেউ মনে করছেন এটি এক প্রাচীন গোপন রীতি।

মাচু পিচ্চু ও ইনকা সভ্যতার জন্য প্রসিদ্ধ পেরুর জন্য এটি আরও একটি মূল্যবান প্রাচীন আবিষ্কার। এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মরুভূমি ও উপকূলের মাটির নিচে অসংখ্য প্রাচীন সভ্যতার গল্প এখনো অপেক্ষা করছে।

ড. কাস্তিল্লো বলেন, “এটি শুধু হাড় বা প্রত্নবস্তু নিয়ে নয়, এটি মানুষের জীবন ও মৃত্যুর অর্থ খোঁজার একটি জানালা।”

মমির রহস্যময় ভঙ্গি-হাত মুখের উপর-সম্ভবত আমাদের উত্তর না দিতেও পারে, কিন্তু এটি চিরন্তন প্রশ্ন রেখে যাচ্ছে: এটি কি রক্ষা, শ্রদ্ধা, নাকি চিরকালের নীরবতা বোঝাতে করা হয়েছে?

সূত্র: newstoday