ইরানের দীর্ঘতম এবং একমাত্র নৌযান চলাচলযোগ্য নদী কারুন ক্রমেই হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক রূপ। খরা, প্রবাহ কমে যাওয়া, শিল্পবর্জ্য ও রাসায়নিক দূষণ এবং জলাভূমি ধ্বংসের কারণে নদীটির বড় একটি অংশ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়েছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাঁধ নির্মাণের প্রভাব
কারুন নদীর ওপর নির্মিত কারুন-৩, কারুন-৪ এবং গোতভান্দ বাঁধ থেকে উৎপাদিত জলবিদ্যুতই ইরানের অন্যতম প্রধান শক্তির উৎস। কিন্তু এসব বাঁধের কারণে পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিশেষজ্ঞরা ইরানের বাঁধ নীতিকে টেকসই নয় বলে সমালোচনা করে আসছেন। তাদের মতে, বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনার অভাব এবং স্বল্পমেয়াদী রাজনৈতিক স্বার্থই নদীটির বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
জলাভূমি বাস্তুতন্ত্র বিশেষজ্ঞ আলী আরভাহি ইরান ইন্টারন্যাশনালকে বলেন, নদীর পতনের মূল কারণ হলো— অতিরিক্ত বাঁধ নির্মাণ, অন্যান্য প্রদেশে পানি সরানো এবং পানি-নির্ভর ফসল (যেমন আখ ও ধান) খুজেস্তানে ব্যাপকভাবে চাষ করা।
তিনি জানান, একসময় প্রতি সেকেন্ডে ৫০০-৬০০ ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ১০০ ঘনমিটারেরও নিচে।
কৃষি ও পরিবেশের চাপ
খুজেস্তান প্রদেশে এখনো ৮০ হাজার হেক্টরেরও বেশি আখ চাষ হচ্ছে, যদিও এলাকাটি আধা-শুষ্ক জলবায়ুর জন্য উপযুক্ত নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি বড় নীতিগত ভুল, যা সীমিত পানির ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করছে।
পানি সংকটের পাশাপাশি খুজেস্তান এখন মারাত্মক বায়ু দূষণের শিকার। সম্প্রতি এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং সিস্টেম প্রদেশের একাধিক শহরে "অস্বাস্থ্যকর" মাত্রা রেকর্ড করেছে। আহভাজ, হেন্দিজান, বেহবাহানসহ বিভিন্ন শহরের সূচক ছিল ১৫৫ থেকে ১৬৮-এর মধ্যে, যেখানে নিরাপদ মাত্রা ৫০-এর নিচে ধরা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন ও মরুকরণ
ইরান বর্তমানে সুপেয় পানির ঘাটতি, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং কৃষি উৎপাদন হ্রাসসহ একাধিক সংকটে জর্জরিত। পরিবেশবিদ মনসুর সোহরাবি মনে করেন, দুর্বল নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে খরার প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে।
তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ইরানের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বৃষ্টিপাত কমেছে প্রায় ৪৫%। এর ফলে মরুকরণের হার বেড়েছে সারা দেশে।
নদীর গুরুত্ব
জাগ্রোস পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে খুজেস্তান হয়ে পারস্য উপসাগরে গিয়ে মিশেছে প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ কারুন নদী। গবেষ