ভারতের বিতর্কিত ধনকুবের গৌতম আদানি এবং তার গ্রুপের ঋণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এলআইসি) থেকে প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩০ হাজার কোটি রুপি) বিনিয়োগের গোপন পরিকল্পনা করেছিল মোদি সরকারের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। নথি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়, আর্থিক পরিষেবা বিভাগ (ডিএফএস), এলআইসি এবং নীতি আয়োগ একসঙ্গে এই বিনিয়োগ কৌশল তৈরি করেছিল। পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল আদানি গ্রুপের বন্ড ও ইক্যুইটিতে বড় অঙ্কের অর্থ ঢালা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আদানি পোর্টসের ৫৮৫ মিলিয়ন ডলারের বন্ড সম্পূর্ণভাবে এলআইসি অর্থায়ন করেছে। সমালোচকরা এটিকে জনগণের অর্থের অপব্যবহার হিসেবে অভিহিত করেছেন।

এদিকে, আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) গ্রুপ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি ডলারের ঘুষ এবং জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে। তবে আদানি সব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এলআইসি লাখ লাখ ভারতীয়ের জীবন বিমার সঙ্গে যুক্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষের অর্থ নিরাপদ রাখতে হবে। হেমিন্দ্র হাজারি বলেন, “একটি বেসরকারি করপোরেট সত্তায় এত বড় বিনিয়োগ অস্বাভাবিক। যদি এলআইসির সঙ্গে কিছু ঘটে, একমাত্র সরকারই তা উদ্ধার করতে পারবে।”

প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভারতের বিরোধী দলগুলো প্রধানমন্ত্রী মোদি ও আদানি গ্রুপকে তীব্র সমালোচনা করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র বলেছেন, “ভারতীয় করদাতাদের অর্থ আদানির ‘পিগিব্যাঙ্ক’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।” কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলছেন, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের পর এলআইসির বড় লোকসান এই ঘটনার অংশ।

আদানি গ্রুপ এই বিষয়ে জানিয়েছে, সরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে তাদের কোনো ভূমিকা নেই এবং তাদের ব্যবসায়িক উত্থান মোদির জাতীয় নেতা হওয়ার অনেক আগের ঘটনা।